ক্রিকেটে যেভাবে উগান্ডার উত্থান

ছবি- ক্রিকইনফো
নাজমুল হক নোবেল
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ১১:০২
৪৩ বছর বয়সী ফ্রাঙ্ক সুবুগা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ২৭ বছর ধরে। এবারের টি২০ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার উগান্ডার এ স্পিনিং অলরাউন্ডার। এত লম্বা সময় খেলার রহস্য তিনি খোলাসা করেছেন নিজেই, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ১০ কিলোমিটার জগিং করি। এর পর স্ট্রেচিং করে সকাল ১০টা থেকে দলের সবার সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিই।’ আরও একটি রহস্য আছে। তিনি মদ স্পর্শ করেন না; এক কাপ চা, কফি কিংবা জুস পান করেই প্রশান্তি মেলে তাঁর। এই সুবুগাই আসলে উগান্ডার ক্রিকেট ঐতিহ্যের প্রতীক।
সুবুগার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের একটা কাকতালীয় মিল আছে। ১৯৯৭ সালে যে আইসিসি ট্রফি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিত গড়ে দিয়েছিল, সেই আসরে আন্তর্জাতিক পথচলা শুরু করেছিলেন সুবুগা। ২৭ বছর আগে আইসিসি ট্রফি খেলেছিলেন তিনি পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার হয়ে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গড়া দলটি বিলুপ্ত হয়ে যায় ২০০৩ সালে। তাই বলে সুবুগা থেমে থাকেননি। বিশ্বকাপ খেলার অলীক স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যান তিনি। অবশেষে ৪৩ বছর বয়সে এসে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সুবুগার। জিম্বাবুয়ে, কেনিয়াকে হারিয়ে আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে তাঁর দেশ উগান্ডা।
ব্রিটিশ কলোনি উগান্ডায় ক্রিকেট শুরু হয় ১৯৪০ সাল থেকে। তবে সেটা খুবই সীমিত আকারে। এশিয়ান বেনিয়া ও উপনিবেশ স্থাপনকারী ব্রিটিশদের মধ্যে শুরু হওয়া ক্রিকেট ধীরে ধীরে স্থানীয়দের মধ্যে ছড়ায়। বর্তমান উগান্ডা দলটি পুরোপুরি ভূমিপুত্রদের নিয়ে গড়া। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কানাডার মতো অভিবাসীদের দল নয় তারা।
বেশির ভাগ সময় আইসিসির ষষ্ঠ থেকে চতুর্থ স্তরে খেলা আফ্রিকার এ দেশটিকে বিশ্বকাপ স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে কোচিং করানো লরেন্স মাহাথলেনে। ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি উগান্ডা জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর মাথা থেকেই বিশ্বকাপ খেলার চিন্তা জন্ম নেয়। সুবুগা সেই স্মৃতি বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি আমাদের দলের প্রতিভা দেখার পর এক দিন বললেন– আমার মনে হচ্ছে, চেষ্টা করলে তোমাদের পক্ষে ২০২৪ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন সম্ভব। তাঁর কথা শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম। তবে এর পর থেকে আমাদের সবকিছু বদলে যেতে থাকে। তিনি আমাদের নিয়ে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন।’
গত বছর অক্টোবরে আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাইয়ের আগে উগান্ডার হেড কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মাহাথলেনে। তিনি না থাকলেও সেই টুর্নামেন্টে জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় উগান্ডা। ক্রিকেটারদের কাছেও এ ফলাফল বিশ্বাস হচ্ছিল না। আর হবেই বা কেমন করে? এর আগে উগান্ডা আইসিসির কোনো পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে খেলেনি। সেই স্মৃতিও বলতে গিয়ে আবেগে ভেসে যান সুবুগা, ‘নামিবিয়ার কাছে হারার পর আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বললাম। আমরা এ হার ভুলে পূর্ণ মনোযোগ দিলাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচে। আমরা জানতাম, জিম্বাবুয়েকে হারাতে পারলেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবে আমাদের। ছেলেরা মনপ্রাণ উজাড় করে খেলে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দিলেও বিশ্বাস করতে পারছিল না। সেই জয়ের পর আমরা ভোর ৪টা পর্যন্ত জেগে ছিলাম।’
দেশে ফেরার পরও বিজয় উদযাপন চলেছে বলে জানান সুবুগা, ‘দেশে ফিরে দেখি পুরোদমে তখনও পার্টি চলছে। প্রতিদিনই টিভি-রেডিও থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য আমাদের ডাক আসত। বাইরে গেলেই লোকজন আমাদের ঘিরে ধরত। সবাই কেবল ওই ম্যাচের গল্প শুনতে চাইতেন।’ এখন তাদের চ্যালেঞ্জ বিশ্বকাপ। সুবুগা রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় আছেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের জন্য, ‘২৭ বছর ধরে আমি চেষ্টা করছি। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে। আমার বয়স এখন ৪৩, আগস্টে ৪৪ হবে। আমার জন্য এটা অসাধারণ এক বিষয়। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচটি খেলতে আমার তর সইছে না।’ তাই বলে বিশ্বকাপ বিশাল কিছু করার আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখছেন না তারা, ‘নিজেদের আমরা বিগ হিটিং দল মনে করি না। কেবল নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে চাই।’ নিজেদের দেশে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।
- বিষয় :
- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
- উগান্ডা