উগান্ডা: নামে কী আসে যায়

ছবি- ক্রিকইনফো
জহির উদ্দিন মিশু
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪ | ২১:৪২ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ | ২১:৪৭
‘বেশি কথা বললে উগান্ডায় পাঠিয়ে দেব।’ ‘কিরে উগান্ডা’– দেশটির নাম ঘিরে এমন বহু রসিকতা বাংলাদেশে প্রচলিত। কেউ মজা করে বন্ধুকে বলেন– মজা লুটেন। আবার কেউ রাগ ঝাড়তে ব্যবহার করেন এই দেশের নাম।
সম্প্রতি টি২০ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো জায়গা পাওয়ার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে উগান্ডা ট্রল। তারা দরিদ্র, তারা আফ্রিকার, তাদের অধিকাংশ বস্তিতে বেড়ে উঠেছেন; তার মানে এই নয়– গেল গেল সব গেল। তারাও মানুষ, তাদেরও আবেগ-অনুভূতি আছে। হয়তো টানাটানির জীবনটা তাদের অসহ্য লাগে। কিন্তু আর ১০ দেশের মতো তারাও চায় ট্রফি নিয়ে নাচতে। যেমনটা বৃহস্পতিবার বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রথম জয় পাওয়ার পর করেছে। নেচেগেয়ে সবাইকে যেন জানিয়ে দিয়েছে নামে কী আসে যায়। ক্রিকেট সবার খেলা, ক্রিকেট উপভোগের, আনন্দের। সেটাই বোধ হয় বোঝাতে চেয়েছেন উগান্ডার খেলোয়াড়রা। মাঠে ট্রফির রেপ্লিকা রেখে মনের সুখে জয়টা উদযাপন করেছেন। এই একটা জয় তাদের কাছে ট্রফি জয়ের চেয়ে কম কী!
উগান্ডার মানুষের কাছে ফুটবলই বেশি প্রিয়। কিন্তু সাধ আছে কিন্তু সাধ্য যে নেই। ফুটবলে অনেক বিনিয়োগ হয়। সেই তুলনায় আয় কম। সে জন্য ফুটবল ঢিমেতালে চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটেও মন দিয়েছেন দেশটির নীতিনির্ধারকরা। কারণ ক্রিকেটে আয়টা বেশি। দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও খেলেছে উগান্ডা। এবার খেলছে টি২০ বিশ্বকাপ। দলের খেলোয়াড়দের সিংহভাগই ক্রিকেটের পাশাপাশি ভিন্ন কোনো পেশায় নিয়োজিত। না হলে যে তাদের পেট চলবে না। এই যেমন ক্রিকেটার জুমা মিয়াগির কথাই বলা যায়। উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার এক বস্তিতে জন্ম তাঁর। ২২ আন্তর্জাতিক টি২০ খেলে ৩৬ উইকেট নিয়েছেন মিয়াগি। তাঁর সতীর্থ সিমন সেসাজি, ইনোসেন্ট মেওয়েবাজরাও উঠে এসেছেন বস্তি থেকে।
এদের সংগ্রাম, দুঃসময় আর টানাপোড়েনের দিনগুলো কাছ থেকে দেখেছেন উগান্ডার প্রধান কোচ অভয় শর্মা। বিশ্বকাপের আগে দেশটির ক্রিকেটের দায়িত্ব নেন এই ভারতীয়। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা অভয় শর্মা জানেন বস্তির জীবনটা আসলে কেমন। কারণ এশিয়ার অন্যতম বড় বস্তি মুম্বাইয়ের ধারাভির মানুষের জীবনও তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। তবে দুঃখ-কষ্টগুলো যতই নির্দয় হোক না কেন, উগান্ডাকে তিনি আপন করে নিয়েছেন দারুণভাবে। এই দলটাকে নিয়ে শর্মার স্বপ্নটাও বড়, ‘এই দলটির অধিকাংশ ক্রিকেটারই উঠে এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। যখন আমি তাদের দায়িত্ব নেব, তার আগেও জানতাম না ওরা কোন পরিবেশে বড় হয়েছে। যেখানে বেঁচে থাকার জন্যই লড়াই করতে হয়, সেখানে কিনা ক্রিকেট খেলেছে ওরা।’
- বিষয় :
- উগান্ডা
- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ