ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নতুন প্রজন্মের হাতে ব্রাজিল

নতুন প্রজন্মের হাতে ব্রাজিল

লাতিনের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুকুট জয়ে নিবিড় অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গে ব্রাজিলের অধিনায়ক ভিনিসিয়ুস জুনিয়র সংগৃহীত

 সঞ্জয় সাহা পিয়াল

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪ | ০০:৩৫ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪ | ০৯:৪৭

ভদ্রলোকের নামটি মনে নেই, তবে তাঁর কথাগুলো কানে বাজে। ‘বাংলাদেশে কি আমাদের ব্রাজিলিয়ান লিগের ম্যাচ টেলিভিশনে দেখা যায় না? এ কারণেই তোমরা শুধু ইউরোপিয়ান লিগে আমাদের যারা খেলে তাদের চিন, বাকিদের তোমরা চিনই না। নামটি শুনে রাখো– এন্ড্রিক। নেইমারকে ছাপিয়ে যাবে ছেলেটি।’ কাতার বিশ্বকাপের সময় দোহায় কোনো এক ম্যাচ শেষে মেট্রোরেলে পাশে বসা সাও পাওলোর এক বাসিন্দা বন্ধুত্ব জমিয়েছিলেন। এর পর ‘এন্ড্রিক’ লিখে সার্চ দিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখা হয়েছে। কিন্তু এবার বোধ হয় সময় এসেছে ইউটিউবের অ্যাড আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া হলুদ জার্সিতে এন্ড্রিকের ম্যাচ দেখার। কোপায় নেইমারশূন্য ব্রাজিলের বড় ভরসার নাম ১৮ ছুঁইছুঁই এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। সাও পাওলোর ক্লাব পালমেরিয়াস ছেড়ে এই মৌসুমেই যোগ দিচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদে। এটুকু খবরের পর আর নিশ্চয়ই এন্ড্রিকের প্রতিভা নিয়ে বাড়তি কিছু বলার দরকার নেই। সম্প্রতি ইংল্যান্ড ও স্পেনের বিপক্ষে ব্রাজিলের হয়ে দুটি গোল ফুটবলবিশ্বে তাঁর আগমনীর বার্তা দিয়েছে। কোপা আমেরিকায় মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা) কোস্টারিকার বিপক্ষে নতুন প্রজন্মের এক ব্রাজিল মাঠে নামছে।

নেইমার, ক্যাসেমিরো, থিয়াগো সিলভা– ব্রাজিলের এসব পোস্টার বয় নেই এবারের আসরে। আসলে তাদের নিয়ে বোধ হয় আক্ষেপও নেই সেলেকাও সমর্থকদের। গত বিশ্বকাপের পর থেকে একটা নতুন কিছু করার চেষ্টায় রয়েছে ব্রাজিল। বয়সে কম, যাদের চোট নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না, তরুণ টগবগে গতি, যাদের নিয়ে কোনো ধরনের ট্রমার মধ্যে থাকতে হবে না– ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা তেমনই একটা দল গড়ার চেষ্টা করেছে গত দেড় বছর ধরে। তারা চেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের মতো একটা দল হতে। সে কারণেই রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির জন্য তারা প্রায় একটি বছর অপেক্ষাও করেছে।

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো– তারা রিয়াল মাদ্রিদে যে কৌশলে খেলে থাকেন, সেটাই ব্রাজিল দলে আনতে চেয়েছিলেন ফেডারেশন কর্তারা। কিন্তু সেটা শেষমেশ না হওয়ায় কোচ করা হয় ডরিভাল জুনিয়রকে। ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে ‘ফায়ার ফাইটার কোচ’ হিসেবে পরিচিত তিনি। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, কোনো গৎবাঁধা কোচিং তত্ত্ব তিনি মেনে চলেন না। পরিস্থিতির প্রয়োজনে তিনি যে কোনো ছকে দলকে খেলাতে পারেন। যদিও নতুন কোচের অধীনে সেলেকাওদের অভিজ্ঞতা এখনও খুব একটা ভালো হয়নি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ছয় ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে ব্রাজিল। গেল মার্চে ইংল্যান্ড আর স্পেনের কাছে হেরেছে ৪-৩-৩ ছকে। যেখানে রদ্রিগোকে তিনি এক জায়গায় মার্ক না করে পুরো মাঠে খেলিয়েছেন। এবার কোপায়ও ডরিভালের চমক থাকতে পারে এন্ড্রিককে নিয়ে।

পুরোনো সব তারকাকে বাইরে রেখে একটা নতুন প্রজন্মের ব্রাজিল দল গড়া হয়েছে এবারের কোপায়। সেখানে অবশ্যই বড় তারকা অধিনায়ক ভিনিসিয়ুস জুনিয়র রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাত্রই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। আক্রমণভাগে তাঁর সঙ্গে থাকবেন রিয়াল মাদ্রিদের সতীর্থ রদ্রিগো। ব্যাকআপে এখানে চারটি অপশন রয়েছে– বার্সেলোনার রাফিনহা, আর্সেনালের মার্টিনেলি, উলভারহাম্পটনের মিডফিল্ডার পেপে আর ট্রয়েসের সেভিও। রক্ষণ সামলাতে অ্যালিসনের সামনে থাকতে পারেন সেন্টার ব্যাক পিএসজির মার্ককুইনহোস বা রিয়ালের মিলিতাও। সেই সঙ্গে থাকবে জুভেন্টাসের দানিলো। সব মিলিয়ে ব্রাজিল যেমন, যে কোনো টুর্নামেন্টে এই নামটিই ফেভারিট। তা ছাড়া দেশের জার্সি গায়ে তারা বড্ড বেশি আবেগিও। এবার সেই আবেগকে বশে রেখে পাঁচ বছর পর কোপার ট্রফি উদ্ধারে রিয়াল মাদ্রিদের মতো কৌশলী হতে চান বছর বাষট্টির কোচ ডরিভাল।

আরও পড়ুন

×