ইউরোর সাতসতেরো

ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড-স্পেন। ছবি: গোল
নাজমুল হক নোবেল
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪ | ২১:১৬
নানা কারণে এবার ইউরো স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। জার্মানির এই আসরে ছোট ছোট দলগুলোর দাপট যেমন দেখা গেছে, বড় দলগুলোর অতিরক্ষণাত্মক কৌশলের বোরিং ফুটবলও দেখা গেছে। স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র হওয়া গ্রুপ ম্যাচে বোরিং ফুটবলে বিরক্ত হয়ে ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ডের সমর্থকরাই কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দিকে বিয়ারের গ্লাস ছুড়ে মেরেছিলেন। এবারের আসরের তেমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।
সেই পুরোনো চেহারায় গ্যালারি: কভিডের কারণে এক বছর দেরিতে হয়েছিল ২০২০ ইউরো। এক বছর পেছানো হলেও কভিডের নানা বিধিনিষেধের কারণে গ্যালারিতে প্রাণ ছিল না। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপেও কভিড-সংক্রান্ত কিছু প্রটোকল ছিল। কভিড সার্টিফিকেট, নেগেটিভ পিসিআর টেস্ট ছিল সবার জন্য বাধ্যতামূলক। মহামারির সেই দুঃসহ দিনগুলো পেছনে ফেলে একেবারে স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে গিয়েছিল এবারের ইউরো। এর মধ্যে আলাদা করে বলতে হবে তুরস্কের দর্শকদের কথা। জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী তুরস্কের। তাদের দলের খেলা যে শহরে হতো, পুরো রাত সেই শহর মাতিয়ে রাখতেন তারা। ডাচ দর্শকরাও মাতিয়ে রেখেছিলেন গ্যালারি। নেদারল্যান্ডসের খেলায় পুরো স্টেডিয়াম ‘কমলা-সমুদ্রে’ পরিণত হতো।
ছোট দলের দাপট: ইউরো অভিষেকেই নকআউট খেলেছে জর্জিয়া। শেষ গ্রুপ ম্যাচে পর্তুগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে এ ইতিহাস গড়ে তারা। এমনকি শেষ ষোলোতে স্পেনের বিপক্ষে লিডও নিয়েছিল ইউরোপের ছোট্ট এ দেশটি। চমক দেখিয়েছে আরেক ছোট দল স্লোভাকিয়াও। তারা তো কোয়ার্টার ফাইনালেও প্রায় চলে গিয়েছিল। ইনজুরি টাইমের পঞ্চম মিনিটে ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহাম বাইসাইকেল কিক করে সমতা ফিরিয়ে ছিলেন শেষ ষোলোর সেই ম্যাচে। এর পর অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইন ইংলিশদের জয় এনে দেন। প্রথমবারের মতো নকআউট খেলে ইতিহাস গড়েছে স্লোভেনিয়াও।
বড় দলের গোল খরা: এক স্পেন ছাড়া ইউরোপের আর কোনো বড় দল প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেনি। রক্ষণ নিয়ে অতি সতর্কতার জেরে প্রায় সবাই গোল খরায় ভুগেছে। আসরের অন্যতম ফেভারিট ফ্রান্স সেমিফাইনাল পর্যন্ত মাত্র ৪ গোল করেছে। এর মধ্যে দুটি আত্মঘাতী ও একটি পেনাল্টিতে এবং তারা খেলে গোল দিয়েছে মাত্র একটি। গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ডও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফাইনালে এসেছে। স্লোভাকিয়া ও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালের মোট ২৪০ মিনিটে তারা প্রতিপক্ষের পোস্টে মাত্র ৫টি শট নিতে সমর্থ হয়েছে। গোল খরায় ভুগেছে পর্তুগালও। এর পেছনে ছিল মূলত তারকাদের ব্যর্থতা। ফ্রান্সের তারকা স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে মাত্র একটি গোল করেছেন, সেটিও পেনাল্টি থেকে। পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পাঁচ ম্যাচ খেলেও কোনো গোলের দেখা পাননি। ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন তিনটি গোল করলেও মোটেই ভালো খেলতে পারেননি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা: এবারের আসরে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বেশ ভালো মতোই পরিলক্ষিত হয়েছে। তুরস্কের ডিফেন্ডার মেরিহ ডেমিরাল গোল করে দেশটির উগ্রবাদী ডানপন্থি গ্রুপের ‘গ্রে উলভস’ উদযাপন করেন। দেশটির সঙ্গে আয়োজক জার্মানির রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। অনেকেই বিষয়টিকে দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেছে। তুরস্ক সরকার যদিও ডেমিরালের পক্ষে ছিল। তবে উয়েফা এ জন্য তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ ছাড়া সার্বিয়া, আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার দর্শকদের মধ্যে গ্যালারিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।
নতুন প্রজন্মের আগমনী: এবারের ইউরোতে বেশ কয়েকজন নতুন তারকার আগমনী বার্তা পাওয়া গেছে। এ তালিকায় সবার ওপরে থাকবে লামিনে ইয়ামালের নাম। ১৭ বছর বয়সী এ স্প্যানিশ সেমিতে ফ্রান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ খেলেছেন তিনি। তাঁর সতীর্থ নিকো উইলিয়ামসও দাপট দেখিয়েছেন। এ ছাড়া জার্মানির জামাল মুসিয়ালা, ফ্লোরিয়ান উইর্টজ, তুরস্কের আরদা গুলের ফুটবলবিশ্বকে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।
- বিষয় :
- ইউরো-২০২৪
- লামিন ইয়ামাল
- আর্দা গুলের