ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এক যুগ পর ইউরোপ সেরা স্পেন

বার্লিনে লাল উৎসব

বার্লিনে লাল উৎসব

লোগো

 সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪ | ০৩:১৪ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ | ১৭:১৬

রক্তিম সূর্য ছড়ায় প্রখরতা। ফুটবলের সবুজ গালিচায় রঙিন স্পেনও। লাল রঙের জার্সিতে আগুনে ফুটবলের পসরা লামিনে ইয়ামাল-দানি ওলমোদের। সেই আগুনে পুড়ে ছারখার ইংলিশরা। বার্লিনের অলিম্পিয়াস্তাদিওনে থেকে লন্ডনের ঐতিহাসিক টেমস নদীর মতো জলধারা বইছে ইংল্যান্ড সমর্থকদের চোখে। নিকো উইলিয়ামস ও মিকেল ওয়ারজাবালার অনিন্দ্যসুন্দর গোলেই অপরাজিত স্পেন এক যুগ পর জিতল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। ইউরোর এই মঞ্চে চার শিরোপাজয়ী স্প্যানিশদের উদযাপনের দৃশ্য হ্যারি কেইন-জুড বেলিংহামদের বিষাদের গল্পের পৃষ্ঠাই বাড়িয়েছে। ৫৮ বছর পরও ইংলিশ ফুটবলে ট্রফি জিততে না পারার অভিশাপ মোচেনি। রোববার ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্পেন ফিরে পেল ফুটবলের হারানো রাজত্ব। ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বড় টুর্নামেন্টে মোট ২৬টি ফাইনাল খেলা স্পেনের দলগুলোর কখনও না হারার রেকর্ড ধরে রাখলেন আলভারো মোরাতা-কারভাহালরা।

টিকিটাকার বিরক্তিকর ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে লুইস দে লা ফুয়েন্তের স্পেন আক্রমণে ক্ষুরধার ও গতিময়। ফাইনালের আগ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৩ গোল করা লা ফুরিয়া রোজারা বার্লিনের মঞ্চেও দেখিয়েছেন তাদের ফুটবলশৈলী। ১৭ বছরের কিশোর লামিনে ইয়ামালের সঙ্গে দানি ওলমোদের আগুনে ফুটবলে খুঁজে পাওয়া যায়নি ইংলিশদের। তারুণ্যের পসরা সাজিয়ে ভয়ংকর-সুন্দর ফুটবল উপহারে স্বপ্নের পথচলায় রূপকথার সমাপ্তি স্প্যানিশদের। ২০০৮ ইউরো, ২০১০ বিশ্বকাপ এবং ২০১২ ইউরোর পর ফুটবলের মেজর টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ট্রফি জিতে ১২ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে স্পেন। আর গত আসরে ওয়েম্বলিতে টাইব্রেকারে ইতালির কাছে পরাজয়ের দুঃখগাথা মুছতে না পারা ইংল্যান্ড এবার আটকেছে স্প্যানিশদের গতিময় ফুটবলের কাছে।

পাসের ফুলঝুরি, গতিময় ফুটবলের সঙ্গে জমাটবদ্ধ আক্রমণই স্পেনের বড় অস্ত্র। সেই অস্ত্রের সামনে ছিল ধীরগতি কিন্তু অকুতোভয় ইংলিশ ফুটবল। ফাইনালের আগে দু’দলকে নিয়ে এমন সব আলোচনায়ই ছিল। তবে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে প্রথমার্ধে হাই কোয়ালিটি ফুটবল খেলেছে দু’দল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর নায়ক লামিনে ইয়ামালকে প্রথমার্ধে আটকে রাখে তারা। পেলের ৬৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার ইয়ামাল দেখাতে পারেননি জাদু। আগের ম্যাচগুলোতে মন্থর গতির ফুটবল খেলা থ্রি লায়ন্সরা এই অর্ধে খেলেছে অ্যাটাকিং ফুটবল। রক্ষণে তিন এবং মধ্য মাঠে চার ফুটবলার খেলিয়ে ইংলিশ কোচ গ্যারেথ সাউথগেট যে ভুল করেননি, তা অন্তত প্রথম ৪৫ মিনিটে ফুটে ওঠে। বরং শিরোপা মঞ্চে স্পেনকে আগের মতো বিধ্বংসী দেখা যায়নি এই অর্ধে।

বিরতির পরই দৃশ্যপট বদলে দেন নিকো উইলিয়ামস। প্রথমার্ধে নিজের ছায়া হয়ে থাকা ইয়ামাল ছিলেন স্পেনের গোলের মূল কারিগর। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে লামিনে ইয়ামালের নিখুঁত পাসে দৌড়ে এসে বাঁ-পায়ের শটে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন উইলিয়ামস। গোলের আনন্দে মেতে ওঠে স্প্যানিশরা। ১ মিনিট পর দ্বিতীয় গোল পেতে পারত তারা। কিন্তু বক্সের ভেতরে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ওলমোর শট দূরের পোস্ট দিয়ে চলে যায়। গোল দেওয়া স্পেন হয়ে ওঠে আরও বিধ্বংসী। ৬৬ মিনিটে বক্সের ভেতরে বাঁ প্রান্ত থেকে ইয়ামালের শর্ট পিকফোর্ডের হাতে না লাগলে চলে যেত জালে। পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড সমতায় ফেরে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে। বুকোয়া সাকার মাইনাস থেকে বেলিংহাম একটু পেছনে বাড়িয়ে দেন। বাঁ পায়ের শটে বদলি কোলে পালমারের বাঁ পায়ের নিখুঁত শট চলে যায় জালে। স্পেন গোলরক্ষক উনাই সিমোন ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি। ৮২ মিনিটে দারুণ একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল লা ফুরিয়া রোজারা। ১৭ বছরের ইয়ামালের শট ঠেকিয়ে আবারও ত্রাতা হয়ে ওঠেন গোলরক্ষক পিকফোর্ড। তবে ৮৬ মিনিটে বদলি মিকেল ওয়ারজাবালার গোলে মেতে ওঠে স্পেনের গ্যালারি। থেমে যায় ইংলিশদের চিৎকার। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দে মেতে ওঠে স্প্যানিশরা। ইংলিশরা তখন হতাশায় নিমজ্জিত।

আরও পড়ুন

×