সাক্ষাৎকারে জাকের (প্রথম পর্ব)
‘সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছি’

ছবি- বিসিবি
সেকান্দার আলী
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০:৫১ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৯:৫৮
বাংলাদেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে সাহসী তরুণ ক্রিকেটারদের অন্তর্ভুক্তিতে। শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও জাকের আলী তাদের অন্যতম। তারা ব্যাটিং বিভাগকে কার্যকর করেছেন মারকাটারি ব্যাটিং দিয়ে। লড়াকু মানসিকতা দিয়ে সফল হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। বাংলাদেশ দলের ক্যারিবীয় সফরে তিন সংস্করণেই অসাধারণ ছিলেন জাকের আলী। তিনি সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে ফোনে সিরিজের গল্প শুনিয়েছেন সেকান্দার আলীকে।
সমকাল: অসাধারণ একটি সিরিজ গেল আপনার। এই পরিবর্তনের রসায়ন সম্পর্কে একটু বলবেন?
জাকের: আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই খেলছি। নিয়মিত পারফরম্যান্স করেছি। আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল সব ফরম্যাটে খেলা। আমি কখনোই নির্দিষ্ট একটি সংস্করণকে সামনে রেখে এগোইনি। সব সময় সব ফরম্যাটকে গুরুত্ব দিয়েছি। এটা ভালো লাগা যে, এবার তিন সংস্কারণে ভালো করেছি। আমার জন্য এটি একটি অর্জন বলতে পারেন।
সমকাল: টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। এখন তিন সংস্করণে খেলেন। টেস্ট, ওয়ানডে দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
জাকের: পারফরম্যান্স ছাড়া কখনোই আপনাকে জাতীয় দলে বিবেচনা করা হবে না। আমার মধ্যে এই চ্যালেঞ্জটা ছিল যে, পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলের সব সংস্করণে খেলব। আমি সুযোগ কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি। পাকিস্তানে ‘এ’ দলের হয়ে বড় (১৭২ রান) একটি শতক করায় টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছে। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল, যে সংস্করণেই খেলি, আমি আমার সেরা পারফরম্যান্স করব। লিগে যে প্রসেসে খেলে রান করি, আন্তর্জাতিক সিরিজেও ওইভাবে খেলতে চেয়েছি এবং খেলছি।
সমকাল: টি২০ বিশ্বকাপে ভালো করতে পারেননি। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই এবার অসাধারণ পারফরম্যান্স। কীভাবে সম্ভব হলো?
জাকের: বিশ্বকাপ আমার জন্য অনেক বড় একটি শিক্ষার মঞ্চ ছিল। আমি মনে করি, বিশ্বকাপ আমাকে পরিণত হতে সাহায্য করেছে। বিশ্বকাপে খারাপ করার পর আমি বিমর্ষ ছিলাম। সেখান থেকে অনেক পরিশ্রম করে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। এই ভেন্যুতে (কিংসটাউনের অ্যারন ভেলে) সব কিছু হারিয়েছিলাম, এই ভেন্যুতেই অনেক কিছু পেলাম। মাঝখানের কয়েকটা মাস চিন্তা করে দেখেছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রচুর বাতাস থাকে। উইকেট একটু ট্রিকি হয়। এটা বুঝতে আমার একটু দেরি হয়েছে। এসব মাথায় নিয়ে প্রস্তুত হয়েছিলাম। এই সফরের জন্য ভালো একটি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এ কারণে আমি পারফর্ম করতে পেরেছি।
সমকাল: আপনি রান আউট ভেবে মাঠ ছেড়েছিলেন। ম্যাচ অফিসিয়ালরা যখন জানালেন আপনি নন, শামীম হোসেন আউট। দ্বিতীয়বার ব্যাটিং করতে নামার সময় মাথায় কী কাজ করছিল?
জাকের: সত্যি বলতে আমি খুব স্বাভাবিক ছিলাম। যখন শেখ মেহেদি আউট হয়ে গিয়েছে তখন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। ভাবছিলাম সব শেষ। আমি দলের ব্যাটিং ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছি। ওই সময় খুব ভয় পেয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। নিজেকে নিজে গালি দিচ্ছিলাম, এত সুন্দর মুহূর্ত শেষ হয়ে গেল আমার কারণে। যদিও কলটা মেহেদি ভাই-ই দিয়েছিলেন। কিন্তু দোষটা তো আমার কাঁধেই আসে। এক ওভারে দুটি রানআউট হলো। ওই কারণে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু কিছু করারও ছিল না। খেলতেই হবে। আবার ব্যাটিং শুরু করি। পরে আল্লাহই সম্মান দান করেছেন। যা কিছু ঘটেছে সবাই তা দেখেছেন।
সমকাল: আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে আপনার মাথায় বল লেগেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ব্যথা পেলেন। কিন্তু কখনও আপনাকে বিচলিত হতে দেখা যায়নি। এটিই কি লড়াকু মানসিকতা?
জাকের: লড়াই তো ছোটবেলা থেকেই করছি। নিজের জন্য, পারফরম্যান্স করার জন্য। ছোটবেলা থেকেই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন ছিল। দেখেন, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে আপনি খেলতে আসবেন, এ রকম জায়গায় ব্যথা পাবেন না, তা হতেই পারে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে শুধু মাথায় বল লাগেনি, হাতের অনেক জায়গায় ব্যথা আছে। আঙুল ‘ডিস লোকেট’ হয়েছে। অনেক কিছু হয়ে গেছে, অনেকে জানে না। খেলতে গেলে এগুলো ঘটবেই। জিনিসগুলো যত গোপন রাখা যায়, তত ভালো। পরিকল্পনা ছিল প্রতিপক্ষকে চোটের বিষয়গুলো জানতে দেব না। আসলে পুরো জিনিসটাই মাইন্ডসেট। মাইন্ডসেট তৈরি করে এসেছিলাম যে, টাফ থাকব, নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা করব।
সমকাল: সব অর্জনই গর্বের। এর পরও জানতে চাই– টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ পারফরম্যান্সের মধ্যে কোনটা বেশি আনন্দ দিয়েছে?
জাকের: আমার কাছে টেস্ট পারফরম্যান্স স্পেশাল ছিল। কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে বোঝাতে পারব না। চতুর্থ দিনের ওই একটি ঘণ্টা ওরা যে কঠিন সময় আমাকে দিয়েছে! কী বোলিং করেছে। ওই পরিস্থিতির ভেতরেও পাঁচটি ছয় মারতে পারা ভীষণ ভালো লাগা। আমি সেঞ্চুরি নিয়ে চিন্তাই করেনি। শতক হয়নি ওটা নিয়ে কোনো কষ্ট নেই। আমার সবচেয়ে ভালো লাগা, কঠিন পরিস্থিতির ভেতরেও পাঁচটি ছয় মেরে দলের উইনিং স্কোর করতে পেরেছি। টেস্ট ম্যাচটিকে আমি বিশেষ জায়গায় রাখব।
- বিষয় :
- জাকের আলী