সরকারি হস্তক্ষেপ নয়, শৃঙ্খলা ফেরাতে ফারুকের অপসারণ: ক্রীড়া উপদেষ্টা

ছবি- সংগৃহীত
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫ | ২০:০৫ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৫ | ২০:১৩
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) সাম্প্রতিক রদবদলের মধ্য দিয়ে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)-এর মনোনয়নে তিনি বোর্ড পরিচালকের পদ পান এবং পরে পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হন বিসিবির সর্বোচ্চ পদে। তবে এই পরিবর্তন ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে—সরকারি হস্তক্ষেপে কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বিসিবির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে? আর কেন সরানো হলো ফারুক আহমেদকে?
এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। আজ (শনিবার) জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ডে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং বিপিএলে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার দায়ে ফারুক আহমেদকে অপসারণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত আইসিসির গাইডলাইন মেনেই নেওয়া হয়েছে, তাই নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা নেই।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিসিবির ১০ সদস্যের বোর্ডের মধ্যে ৮ পরিচালক ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন, যাতে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানানো হয়। ওই চিঠিতে তাকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ ও ‘আধিপত্যবাদী’ বলে উল্লেখ করে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। এর পরপরই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফারুকের এনএসসি মনোনীত পরিচালক পদ বাতিল করে।
বিপিএল নিয়ে আর্থিক অনিয়ম, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ঘিরে স্বচ্ছতার অভাবসহ নানা অব্যবস্থাপনা ফারুকের অপসারণের মূল কারণ বলে জানিয়েছে এনএসসি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আসিফ আরও বলেন, ‘এটা আসলে শাস্তি বা অন্য কিছু নয়। নতুন নেতৃত্ব আসার পর আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল ৯ মাসে সেটা আমরা দেখিনি। এই সরকার আসার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে এসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর থেকে আমরা ক্রমঅবনতি দেখতে পাচ্ছি। খুবই দুঃখজনকভাবে আমাদের যে নতুন নেতৃত্ব এসেছিল তারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। আমি তো স্পোর্টসের মানুষ না। আমি ১০ জনের সাথে কথা বলে যাকে মনে করেছি, ভালো পরিচালনা করতে পারবে তাকেই বাকি পরিচালকরা সভাপতি মনোনীত করেছিলেন; কিন্তু সেই নেতৃত্ব ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের তো বিচার করতে হবে পারফরম্যান্স দিয়ে। সেই পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়।’
বিপিএল প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিপিএল-এর যে সত্যানুন্ধান কমিটি ছিল তাদের প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, সেখানে অনেক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিপিএলে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলোতে মোটামুটি ফারুক আহমেদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আপনারা জানেন যে, বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জন সভাপতির বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব এনএসসিতে পাঠিয়েছে। ক্রিকেটে যেমন ১১ জন মাঠে খেলে সে রকম টিম বিসিবিতে হয়নি আসলে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী যারা ছিলেন বিসিবিতে তারা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছেন। বাকি যারা আছেন, তারা কেউই ওনার (ফারুক) সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না। তাই আমরা দেখছিলাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্রমাবনতি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে পরিস্থিতি এবং বিপিএলের সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন- সবমিলিয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে।’
অন্যদিকে, অপসারণের আগে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন ফারুক আহমেদ। সেখানেই তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে তিনি তাতে রাজি হননি। ফারুক বলেন, ‘আমাকে কোনো ব্যর্থতার কারণ জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে ‘উপরমহল আমাকে চায় না।’ এতে কোনো ক্রিকেটীয় যুক্তি নেই।’
প্রসঙ্গত, ফারুক আহমেদও এনএসসির মনোনয়নে বিসিবির সভাপতি হয়েছিলেন। এবার একই প্রক্রিয়ায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, আমিনুল ইসলামকে এনএসসি থেকে বিসিবির কাউন্সিলর করা হয়, এরপর দ্রুত তাকে পরিচালক ও পরে সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এনএসসি যে কাউন্সিলরকে চাই, তাকেই পরিচালক হিসেবে মনোনীত করতে পারে।
যদিও আইসিসি ক্রীড়া বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপকে কড়া ভাষায় নিষেধ করে থাকে। অতীতে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতের কিছু ক্রীড়া সংস্থা এমন হস্তক্ষেপে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। তবে ক্রীড়া উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন ঝুঁকি নেই।
- বিষয় :
- ফারুক আহমেদ
- আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
- বিসিবি