ঋতুদের প্রতিটি গোলেই বড় মাপের ফুটবলারের ছাপ

রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার, জাতীয় দল
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ১৩:০৬ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৫ | ১৪:১৯
ফলাফলটা অনুমেয়ই ছিল! ইয়াঙ্গুনের থুন্না স্টেডিয়ামের স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের নামের পাশে কত ডিজিটের সংখ্যা বসবে, সেটা নিয়েই ছিল আগ্রহ। বাংলাদেশ ৭: ০ তুর্কমেনিস্তান– হুট করে স্কোর লাইনটা দেখে বা শুনে থাকলে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যারা নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের খোঁজখবর রাখছেন, তাদের কাছে এ স্কোর লাইন স্বাভাবিক মনে হওয়ারই কথা!
প্রথম দুই ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা বাহরাইন ও স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারানোর পর র্যাঙ্কিংয়ে ১৩ ধাপ পিছিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তান বাংলাদেশের আক্রমণ ঝড়ের সামনে উড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে দলটির কোচ বোরিস বোরোভিক বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারের ওপর অভিমান করলেও করতে পারেন! কারণ ‘আনুষ্ঠানিকতা’য় পরিণত হওয়া এমন ম্যাচে সেরা একাদশটাই অপরিবর্তিত রেখেছিলেন বাটলার।
আসলে ইংলিশ ম্যানের দোষ কী! খেলার সঙ্গে বাংলাদেশ যে মানসিকতায়ও বড় দল হয়ে উঠছে, তা তো প্রথমে তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে। বুধবার এক ম্যাচ হাতে রেখে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ নিশ্চিত হওয়ার পরও পা মাটিতে রেখে ইংলিশ কোচ বলেছিলেন, এখনও অর্ধেক কাজ বাকি। পুরো কাজ শেষ করে অর্থাৎ ষোলোকলা পূর্ণ করে উদযাপন সারার প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বাটলারের মাঠে আসা।
শিষ্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে কোচের বার্তা। দলের প্রাণভোমরা ঋতুপর্ণা চাকমা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ শেষ করেই হবে উদযাপন। বাহরাইন, মিয়ানমার, সর্বশেষ তুর্কমেনিস্তান– তিন ম্যাচে ১৬ গোল দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এদিন ম্যাচ শেষে সবাই গোল হয়ে হইহুল্লোড় করে উদযাপন সারলেন আফিদা, ঋতুপর্ণারা। সাত গোলের ম্যাচে ঋতুপর্ণা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র করেছেন জোড়া গোল। একটি করে গোল করেছেন মনিকা চাকমা, স্বপ্না রানী ও তহুরা খাতুন। স্বপ্না, ঋতুপর্ণা, শামসুন্নাহারদের প্রতিটি গোলে বড় মাপের ফুটবলারের ছাপ।
৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে গোলের মালা গাঁথা শুরু করেন স্বপ্না। খেলা শেষেও ইউটিউবে বারবার লুপ করে দেখা যায় এমন দর্শনীয় গোল। এর পরে কে কখন তুর্কমেনিস্তান বক্সে ঢুকে গোল করে বের হয়ে যাচ্ছেন, নোটবুকে তা টুকে রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। পাঁচ গোলের পর তুর্কমেনিস্তান গোলরক্ষক পরিবর্তন করে। তবুও প্রথমার্ধ শেষে গোল সংখ্যা হলো সাতটি এবং শেষ পর্যন্ত স্কোর লাইন সেটাই থাকল।
বিশেষভাবে মনে রাখা গেল শেষ গোলটি এসেছে আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা ঋতুপর্ণার ট্রেডমার্ক গোল থেকে। কাল মুড়িমুড়কির মতো গোল করেও মেয়েদের উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। ভাবখানা এমন যেন এ আর এমন কি! শামসুন্নাহাররা আঙুল দেখিয়ে শুধু গোল নম্বরগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল হলো না কেন, এই নিয়েই বরং আফসোস থাকতে পারে।
তবে টানা তিন জয় নিয়ে অপরাজিত থেকে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব শেষ করা বাংলাদেশের কাছে গোল সংখ্যা তো আর মুখ্য হয়ে ওঠার কথা নয়। মেয়েরা যে সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়েছে, ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে তা ফুল হয়ে ফুটে থাকবে অনেক দিন। বাংলাদেশের মেয়েদের খেলা দেখতে বসলে মাঝেমাঝে আকাশের রামধনুর কথা মনে হতে পারে। সুন্দর পাস, সুন্দর ক্রস, সুন্দর গোল নামক কত রং সেখানে ছড়িয়ে! প্রথম থেকে আবির ছড়িয়ে তা স্মরণীয় হয়ে থাকা এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখল বাংলাদেশ। ২০২৬ এশিয়ান কাপেও বাংলাদেশের ফুটবল আকাশে ছড়িয়ে পড়ুক এমন রঙের মেলা।
- বিষয় :
- বাফুফে
- নারী ফুটবল