ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

মিরাজরাই হাসতে চান শেষ হাসি

মিরাজরাই হাসতে চান শেষ হাসি

ফাইল ছবি

সেকান্দার আলী ক্যান্ডি, শ্রীলঙ্কা থেকে

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫ | ০১:২৯

প্রেসবক্সে একজন জানতে চান, শেষ কবে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ কভার করতে আসা ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের কোথায় যেন শূন্যতা অনুভূত হচ্ছিল। রেকর্ড বুক দেখার পর কেমন খালি খালি লাগছিল। কারণ বাংলাদেশ দলের বর্তমান ওয়ানডে রেকর্ড ভালো না। ২০২৩ সালের ক্রিকেট বর্ষপঞ্জি (জুলাই) থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যে ছয়টি সিরিজ খেলেছে, তাতে একটি মাত্র জয়। সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গতবছর মার্চে দেশের মাটিতে। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। বাকি পাঁচ সিরিজে আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের কাছে দুবার করে, আর একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছে। মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে ক্যারিবীয়দের কাছে গত বছর হোয়াইটওয়াশই হতে হয়েছে। অথচ ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার আগে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড বেশ ভালো ছিল। এক সিরিজ খারাপ খেললে লড়াই করে ফিরেছে পরের সিরিজে। 

এক বছর পর আবার একটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের হাতছানি আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে মিরাজরা নিশ্চয়ই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাইবেন। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে শ্রীলঙ্কার এ নান্দনিক ক্রিকেট ভেন্যু বেশ অপরিচিত। ২০১২ সালের টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম আর ২০২৩ সালে এখানে শেষ ম্যাচ খেলেছেন মিরাজরা। এই মাঠে একটি ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের। এক যুগ আগে ২০১৩ সালে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি ডাকওয়ার্থ লুইসের নিয়মে ৩ উইকেটে জিতেছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। ইতিবাচক বলতে ওই একটি জয়, বাকি সবই প্রায় নেতিবাচক রেকর্ড। এখানে খেলা শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ১৬৪ রানে অলআউট হয়েছিল টাইগার বাহিনী। ব্যাটিং স্বর্গেও বড় স্কোর করতে পারেনি। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কান ব্যাটিং কোচ থিলিনা কানদাম্বি সেখানে জানান, এক বছর ধরেই নাকি ব্যাটিং উইকেটে খেলা হয়েছে পাল্লেকেলেতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডেও ব্যাটিং উইকেট আশা করছেন তিনি। লঙ্কান ব্যাটিং কোচের চাওয়া পূরণ হলে দুশ্চিন্তা বাড়বে মিরাজদের। কারণ ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ‘দুঃখ’ই এখন ব্যাটিং। একাধিক জুটি হয় না, ব্যক্তিগত বড় স্কোরও হচ্ছে না। ভালো বোলিংয়ের বিপরীতে কষ্টেসৃষ্টে আড়াইশ রানে যেতে পারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিনশ বা এর কাছাকাছি রানে যেতে পারলেও ম্যাচ জিততে পারেনি। কারণ ওখানে এত বেশি ব্যাটিংবান্ধব উইকেট ছিল যে সাড়ে তিনশ রানও তাড়া করে ফেলার মতো ছিল। বাংলাদেশ ক্যান্ডিতে বড় স্কোর তাড়া বা গড়ার মানসিকতা দেখাতে পারলে ওয়ানডে সিরিজ জেতা সম্ভব বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। 

শ্রীলঙ্কা সফরে এখন পর্যন্ত যে দুটি ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে, সেখানে বড় স্কোর ছিল না। প্রথমটিতে ২৪৪, দ্বিতীয়টিতে ২৪৮ রান হয়েছে। উভয় ম্যাচে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে কানদাম্বির তথ্যমতে ক্যান্ডির এ মাঠের উইকেটে পেস ও বাউন্স ইভেন থাকে। এর অর্থ হলো ব্যাটাররা মানিয়ে নিয়ে টিকে গেলে লম্বা ইনিংস খেলতে পারবেন। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলে বড় ইনিংস খেলার মতো বেশ কয়েকজন ব্যাটার আছেন। মিডলঅর্ডারে অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কাই সেট হলে বড় রান করেন। সেক্ষেত্রে পাল্লেকেলেতে বোলারদের সংগ্রাম করতে হতে পারে। 

বাংলাদেশের বোলিং তুলনামূলক ভালো হওয়ায় শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং কৌশলকে বেছে নিতে পারে। অর্থাৎ কিউরেটরকে হয়তো ব্যাটিং উইকেটই বানাতে বলেছিল। কারণ তারা জানে বাংলাদেশের দুর্বলতা ব্যাটিংয়ে। তবে ওপেনিং জুটিতে তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমনের মধ্যে জুটি গড়ে উঠলে এবং নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, শামীম হোসেন পাটোয়ারিরা ভালো করলে তখন রেকর্ড বদলে দেওয়ার সুযোগ থাকবে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিং করার সময় উরুর পেশিতে চোট পাওয়া শান্ত শেষ পর্যন্ত না খেললে কপাল খুলতে পারে নাঈম শেখের। পাটোয়ারি গত ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিং– দুই বিভাগে ভালো করায় ছন্দে না থাকা লিটনের এ ম্যাচেও ফেরা হবে না। মেডিকেল প্রোটোকল অনুযায়ী ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ শেষ ওয়ানডেতে খেলবেন, বাদ পড়বেন হাসান মাহমুদ। স্পিন বিভাগ নিয়ে মধুর সমস্যা আছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বাঁহাতি তানভীর ইসলাম সিরিজে ফেরার ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে একাদশে জায়গা পাকা করেছেন। মিরাজ ভালো না করলেও খেলবেন ক্যাপ্টেন্স কোটায়। তাতে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের ফেরার সুযোগ কমে যাবে। অবশ্য পিচের বৈশিষ্ট্যের কারণে দুই পেসার খেলালে রিশাদের সুযোগ হতে পারে। সেই সঙ্গে পাটোয়ারিকে বিকল্প স্পিনার হিসেবে প্রেমাদাসার মতো কাজে লাগাতে পারবেন অধিনায়ক; যদিও ভালো ট্র্যাকে ভালো করতে লাগবে প্রতিষ্ঠিত স্পিনার।

আরও পড়ুন

×