ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ওপর থেকে তাকিয়ে দেখবেন 'ফুটবল ঈশ্বর'

ওপর থেকে তাকিয়ে দেখবেন 'ফুটবল ঈশ্বর'

ছবিটা এখন শুধুই স্মৃতি। ২০১০ বিশ্বকাপে প্রিয় শিষ্য মেসির সঙ্গে প্রয়াত দিয়েগো ম্যারাডোনা

আলী সেকান্দার

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২১ | ১২:০০

ঈশ্বর, মনে পড়ে সেই ফাইনালের কথা, ১৪ বছর আগে আমরা যে কোপার ফাইনাল খেলেছি। আমি তখন তরুণ, ১৮ নম্বর জার্সিতে খেলি। সেবার ভেনেজুয়েলার হোসে পাচেনচো রোমেরো স্টেডিয়ামের ফাইনালে হেরে গিয়েছিলাম ব্রাজিলের কাছে। সেদিনের সেই কষ্ট আজও হৃদয়ে বহন করে চলেছি। মারাকানায় কাল ব্রাজিলের বিপক্ষে আমরা আরেকটি কোপার ফাইনাল খেলতে নামছি। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে নামব আপনারই জন্য। আপনি অনন্তলোকের বাসিন্দা হলেও মর্তে আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। ফুটবলের ঈশ্বরকে কি কেউ ছেড়ে থাকতে পারে। অন্তত কোনো আর্জেন্টাইন পারে না। আমার পক্ষে তো সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ আপনাতে আমি, আমাতে আপনি একাকার হয়ে গেছেন ফুটবল বিশ্বে। আমি নিশ্চিত ওপর থেকে আর্জেন্টিনার সব ম্যাচ দেখেছেন। কালকের ফাইনালেও নিশ্চয়ই থাকবেন। দু'চোখ ভরে দেখতে থাকুন আরাধ্য ট্রফিকে, যেটা জিতে আপনাকেই উৎসর্গ করতে চাই আমরা। আশীর্বাদ করবেন এ যাত্রায় যেন আপনার ট্রেডমার্ক ১০ নম্বর জার্সির মর্যাদা রাখতে পারি।
দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনাকে লিওনেল মেসির এই কাল্পনিক চিঠি পৃথিবীর কালির অক্ষরে লেখা নয়, লেখা হৃদয়ের গোপন কালিতে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ফুটবল টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকার ৪৭তম আসর শুরুর আগেই তা লিখে রেখেছেন মেসি। টুর্নামেন্ট শুরুর ক্ষণ থেকে যেটা নানা আঙ্গিকে প্রকাশিত হয়েছে। টুর্নামেন্টের অনাড়ম্বর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যেমন আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছিলেন ফুটবল ঈশ্বর, তেমনি মেসিরা মাঠে নেমেছেন তাদের নেতাকে স্মরণ করে। প্রতিটি ম্যাচের আগে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে তর্জনী দিয়ে দেখিয়েছেন ম্যারাডোনাকে। চিলির বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র করে মেসিরা স্মরণ করেছেন প্রয়াত কিংবদন্তিকে। ফুটবল ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে পরের দুটি ম্যাচই জিতে নেয় ১-০ গোলে। কোপার রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের পর প্যারাগুয়েকে হারিয়ে গুছিয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। যে আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে গ্রুপের শেষ ম্যাচে বলিভিয়াকে উড়িয়ে দেয় ৪-১ গোলে। উড়ন্ত ছন্দ ধরে রেখে কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নেন মেসিরা। সেমিতে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে উন্নীত হয় ফাইনালে। যেখানে আগে থেকেই মেসিদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নেইমাররা।
২০০৭ সালে ম্যারাডোনার কোচিংয়ে যেবার প্রথম কোপায় অংশ নেন মেসি সেবার ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল ব্রাজিল। সেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষেই কাল আরেকটি ফাইনাল ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার। যে ফাইনালে মেসিদের ভালো খেলার প্রেরণা হবেন ফুটবলের কিং, যিনি কিনা ১৯৮৬ সালে দেশের জন্য শুধু বিশ্বকাপই জেতেননি, আর্জেন্টিনাকে পরিচিতি এনে দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে। সেই ম্যারাডোনার ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর শতকোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে দূর আকাশের তারা হয়েছেন মেসিকে নতুন ফুটবল ঈশ্বর হওয়ার সুযোগ করে দিতে। নিশ্চয়ই মর্তলোক থেকেও প্রিয় আর্জেন্টিনা ও ভালোবাসার মেসির জন্য প্রার্থনা করছেন তিনি। আর অনন্তলোকে অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন মেসিদের কাছ থেকে ২০২১ কোপার শিরোপা জিতে উৎসর্গিত হওয়ার লোভে।

আরও পড়ুন

×