ঝুঁকিপূর্ণ চ্যাটজিপিটি

ঝুঁকিপূর্ণ চ্যাটজিপিটি
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০৬:২৪ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৩:০৯
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঘরানার চ্যাটবট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য বেহাতের অভিযোগ এখন প্রমাণিত। ওপেনএআই উদ্ভাবিত চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। নিবন্ধিতদের তথ্য ফাঁস হওয়ার কয়েকটি ঘটনা এরই মধ্যে স্বীকার করেছে ওপেনএআই।
ছবি সম্পাদনা থেকে শুরু করে কোডিং– সবকিছুতেই পারদর্শী যেন চ্যাটজিপিটি। ঠিক যে কারণে প্রযুক্তি উৎসাহীদের আগ্রহ বাড়ছে চ্যাটবটে। ২০২৩ সালে সাড়াজাগানো সেই প্রযুক্তি বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল হচ্ছে চ্যাটজিপিটি। কিন্তু তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে চ্যাটজিপিটি ও ওপেনএআইর বিরুদ্ধে।
খবরে প্রকাশ, চ্যাটজিপিটি নিবন্ধিতদের ব্যক্তিগত তথ্য অর্থের বিনিময়ে বিপণন করছে। ব্যক্তিগত কথোপকথনে তথ্য ফাঁস হওয়ার স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে সবাই নড়েচড়ে বসে।
তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা এরই মধ্যে স্বীকার করেছে চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক সংস্থা ওপেনএআই। সংস্থার নিরাপত্তা ও জালিয়াতি দল সক্রিয়ভাবে জোরেশোরে তদন্ত পরিচালনা করেছে। ব্যক্তিগত কথোপকথন ও ফাইল ফাঁস হয়েছে নিবন্ধিতদের। তদন্তের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তদন্তের ফলের ওপর ভিত্তি করে ভুক্তভোগীরা পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, গ্রাহকের ব্যক্তিগত কথোপকথন ফাঁস করেছে চ্যাটজিপিটি। এতে বহু ধরনের সংবেদনশীল তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। আছে ওষুধ সংস্থার তথ্যও।
সংস্থাটি অভিযোগ তুলেছে, তাদের লগইন, অ্যাপ ও স্টোর নম্বরের তথ্য ফাঁস হয়েছে। আরেকটি সংস্থার কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। যার মধ্যে অপ্রকাশিত গবেষণার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মার্চে চ্যাট টাইটেল ফাঁস হওয়ার খবরও সবার সামনে আসে। তাই গ্রাহকদের চ্যাটবট ব্যবহারে সতর্ক ও সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
উল্লিখিত কয়েকটি ঘটনা চ্যাটজিপিটির সুরক্ষা ত্রুটিকে দফায় দফায় প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যেমন টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন না থাকা বা সবশেষ লগইন তথ্য দৃশ্যমান না হওয়ার অসুবিধা। ফলে সময়ের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার চূড়ান্ত সুফল ব্যবহার করা গ্রাহকরা এখন দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। দিন দিন চ্যাটজিপিটিতে নিত্যনতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে, যা নিবন্ধিতদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। তেমনই আলোচিত ফিচার হলো জিপিটি মেনশন্স, যার মাধ্যমে নিবন্ধিতরা নিজস্ব কাস্টম জিপিটি তৈরি করার সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ নিজের জন্য বট তৈরি করা সহজবোধ্য করেছে চ্যাটজিপিটি। তবে ফিচারটি সবার জন্য বরাদ্দ নয়। যারা চ্যাটজিপিটি প্লাস সাবস্ক্রিপশন নিয়েছেন, শুধু তারাই উল্লিখিত ফিচারের সুবিধা নিতে পারবেন। ফিচারটি দিয়ে প্রতিদিনের নানা ধরনের জটিল কাজ সহজে এআইর মাধ্যমে সম্পাদনা করা যাবে। জিপিটি মেনশন্স আসার ফলে চ্যাটজিপিটি গ্রাহক সংখ্যাও বেড়েছে হুহু করে।
তবে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় চ্যাটজিপিটি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কী ধরনের নির্ভরযোগ্য আর সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয় ওপেনএআই, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্টরা। চ্যাটজিপিটি যেসব ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তার মধ্যে ডেটা চুরি, ফিশিং ই-মেইল, ম্যালওয়্যার ও বটনেট অন্যতম। যখন ডেটা লঙ্ঘনের কথা আসে, তখন নেটওয়ার্কে গোপনীয় তথ্যের অননুমোদিত অ্যাকসেস ও গোপন তথ্য ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড, এমনকি টপসিক্রেট সফটওয়্যার কোড হতে পারে। জরুরি তথ্য হ্যাকারদের হাতে পড়লে তার অপব্যবহার হতে পারে।
ফিশিং ই-মেইল চিহ্নিত করা খুবই দুরূহ। সম্পূর্ণ বৈধ আদলে এলেও এটি মূলত তথ্য ফাঁদ, যা ফিশিং নামে সুপরিচিত। সাইবার অপরাধীরা তাদের বিডিং করে বোকা বানাতে ধূর্ত চ্যাটজিপিটি ই-মেইল ছড়িয়ে থাকে। যার অর্থ হতে পারে স্কেচি সব লিঙ্কে আগ্রহীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। তাই সন্দেহজনক সব ধরনের সংযুক্তি খোলা, সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া, এমনকি গোপন সব অ্যাকাউন্টের অর্থ প্রেরণের তথ্য সতর্কতার সঙ্গে আমলে নেওয়া।
ম্যালওয়্যার হচ্ছে ডিজিটাল বিশ্বের বড় মায়াজাল, যা সব ধরনের বাজে সফটওয়্যারের ছদ্মবেশে সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে। ম্যালওয়্যার ব্যক্তিগত সার্ভারে লুকিয়ে থাকে, আক্রান্তের সব ধরনের তথ্য বিনষ্ট করে, যা চূড়ান্ত সমস্যা সৃষ্টি করে।
হ্যাকারের অধীনে সাইবার সেনা হিসেবে কাজ করে বটনেট। লুকোচুরি করে আক্রমণকারীরা ইন্টারনেট-সংযুক্ত সব টার্গেট ডিভাইসে গুচ্ছ অনুপ্রবেশ করে, যা দুর্বল সফটওয়্যারকে দ্রুতই সংক্রমিত করে। মূলত রোবট ছদ্মবেশে নেটওয়ার্কের দুর্বৃত্তের মতো রূপ ধারণ করে। হ্যাকারের লক্ষ্য সব ধরনের ছায়াময় কার্যকলাপে সাইবার সেনাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
চ্যাটজিপিটি দিয়ে জীবনবৃত্তান্ত তৈরির সময় নিজের প্রকৃত নাম, ঠিকানা ও শনাক্তযোগ্য তথ্য বাদ দেওয়াই শ্রেয়। ব্যক্তিগত বিবরণে যথাযথ তথ্য না দিয়ে চ্যাটবট করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।