ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গল্পে যখন ফ্রিল্যান্সার

গল্পে যখন ফ্রিল্যান্সার

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত.ফ্রিল্যান্সার ফারজুক আহমদ

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৪ | ০৫:২০ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ | ১৯:৫১

ফারজুক আহমদ। ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেইনার। পড়াশোনার পাশাপাশি সারাদেশের দুই হাজারের বেশি প্রযুক্তি শিক্ষার্থীকে দিয়েছেন সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ। পাঁচ শতাধিক তরুণ প্রশিক্ষণ শেষে ফ্রিল্যান্সিং করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। নিজে পাঁচবার জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন সম্মাননা। ‘ওয়ান ম্যান সল্যুশন্স’ নামে গড়ে তুলেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি। বিশ্বের স্বনামধন্য পাঁচটি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছেন। 

সিলেট জেলার বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়্যারম্যান হিসেবে কাজ করছেন ফারজুক আহমদ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ছেন। সিলেট বিভাগের সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সুপরিচিত।

গল্পের পেছনে

স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। ভর্তি হন সিলেটের এমসি কলেজের গণিত বিভাগে। স্বপ্ন পূরণ না হলেও দমে যাননি। পড়ালেখার পাশাপাশি সরকারের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে সুদক্ষ করেছেন। ফ্রিল্যান্সিং করে এখন মাসে আয় করছেন প্রায় লাখ টাকা। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে কয়েকবার পুরস্কার পেয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে গত বছরের আগস্টে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সেরা ফ্রিল্যান্সার সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় তাঁর বাড়ি। ফারজুক মূলত কাজ করেন ডিজিটাল বিপণন, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (এসইও) এবং গুগল অ্যাডস নিয়ে। বর্তমানে ফারজুক ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার ওয়েবসাইট (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) ফাইভার ডটকমে কাজ করেন। এ ছাড়া সরাসরি বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করছেন।

স্কিল শেখা

ফারজুক অফলাইন ও অনলাইন দুই মাধ্যমেই মিলে বহু প্রশিক্ষণ নিয়েছেন; যার মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে ফান্ডামেন্টাল অব কম্পিউটার কোর্সের মাধ্যমে প্রযুক্তি শিক্ষার হাতেখড়ি। পরে হার্ডওয়্যার মেইনটেন্যান্স, ডিপ্লোমা ইন আইসিটি ও অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা ইন ওয়েভ অ্যান্ড সফটওয়্যার বিষয়ে প্রশিক্ষিত হন।

২০১৯ সালে শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের অধীনে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। শুরুতে ৫-১০ ডলার হলেও মাসিক আয় এখন হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অনলাইন থেকে শপিফাই, ই-কমার্স ম্যানেজমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন ছাড়াও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে সব সময় রাখেন আপডেট।

ডিজিটাল মার্কেটিং 

নিজের প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ‘ওয়ান ম্যান সল্যুশন্স’ নিয়ে ব্যস্ত এখন। ফ্রিল্যান্সে আগ্রহীদের দক্ষতা বাড়াতে কাজের পাশাপাশি পরিচালনা করছেন প্রশিক্ষণ। নিজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সারাদেশের প্রায় সব জেলারই আগ্রহীরা সিলেটে ছয় মাস থেকে স্কিল ডেভেলপ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করছেন।
যারা মন দিয়ে কাজ করে, তাদের কখনও পিছপা হতে হয় না। সার্বক্ষণিক গাইডলাইন, সাপোর্ট আর বাস্তবিক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সময়োপযোগী কাজে অবহিত থাকতে হয়। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে অতিথি প্রশিক্ষক হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্লাস নেন।

শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান– যাঁর আয় এখন তিন লাখ ডলার ছাড়িয়েছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দু’জন পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার। বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুক্তরাজ্যে স্বনামধন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। অন্যরা দেশের সুপরিচিত এজেন্সি ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। সিলেটের সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটি পরিচালনা করেন ফারজুক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মূলত কাজ করেন ফাইভার মার্কেটপ্লেস আর সরাসরি ক্লায়েন্ট-টু-ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশনে। ২০১৭ সালে ফাইভার মার্কেটপ্লেস থেকে পাঁচ ডলারের অর্ডার দিয়ে শুরু হয় আয়। বিশ্বের অন্যতম পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখন নিয়মিত কাজ করেন। কাজ করা প্রতিষ্ঠানে মধ্যে এক্স-সুইট, জন হেলি টোফেল ট্রেইনিং, পিটি ভিড, ডিসকভারি ফ্রিডম, স্ট্রিম সেভ ইনকরপোরেশন অন্যতম। যাদের নাম গুগলে সার্চ করলেই পাওয়া যায়। মূলত কাজ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার ম্যানেজমেন্ট ও বিজ্ঞাপনচালিত ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ।

ভবিষ্যতে এজেন্সিতে দুই শতাধিক কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। প্রতিবছর গড়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে সুদক্ষ করে শতভাগ চাকরিযোগ্য করা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে আইটি বিষয়ে পিএইচডি করতে চান। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনশক্তিকে সুদক্ষ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিরলস কাজ করছেন।
প্রতিকূলতা ও বিএফডিএস 

শুরুর দিকে ব্যাংকিং লেনদেনে জটিলতায় পড়তে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সহায়তায় সব ব্যাংকিং সমস্যার সমাধান হয়। ফলে শিক্ষার্থীরাও সহজে ব্যাংকিং সেবা পান বিএফডিএসের বদৌলতে। পেশা নিয়ে ট্রাভেল ও ট্যুরিজম বা প্রতিদিনের কাজে পরিচয় (আইডেন্টিটি) সমস্যা ছিল প্রকট। সরকারি ফ্রিল্যান্সিং কার্ডের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়। বিএফডিএস সিলেট জেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নতুন প্রশিক্ষণার্থীদের সব বিষয়ে সহযোগিতা ও পরামর্শক হয়ে কাজ করেন ফারজুক।

আরও পড়ুন

×