ক্রাউডস্ট্রাইকে দিশেহারা মাইক্রোসফট!

প্রতীকী ছবি
সাব্বিন হাসান
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ২২:২৬ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৪ | ১৫:৪৮
হুট করেই সারাবিশ্বের সব বিমান সংস্থার সার্ভারে সমস্যায় মুখ থুবড়ে পড়ে টিকিট বুকিং ব্যবস্থা। বাতিল হয় হাজারো ফ্লাইট। বিশ্বের নামিদামি সব বিমানবন্দর যেন নিথর হয়ে যায়। যাত্রীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। কী ঘটেছিল সেদিন, তা নিয়ে লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বেই মাইক্রোসফট উইন্ডোজে প্রযুক্তিগত সমস্যায় হইচই পড়ে যায়। থমকে যায় পাঁচ হাজার ফ্লাইট। টালমাটাল বিমান পরিবহন ব্যবস্থা। হঠাৎ করেই নীল রং দৃশ্যমান হয় লাখো কম্পিউটার আর ল্যাপটপ স্ক্রিনে। সুরাহা মেলেনি পিসি বা ল্যাপটপ রিস্টার্ট করেও। ফলে ব্যাংক থেকে শুরু করে আকাশযাত্রা পরিষেবা ছাড়াও অনেক ধরনের পরিষেবা পুরোপুরি থমকে গিয়েছিল। মাইক্রোসফটের প্রযুক্তিগত ত্রুটির ধাক্কা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়, বলতে গেলে আছড়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশেও যার প্রভাব পড়ে।
কিন্তু হঠাৎই কেন ক্র্যাশ করল বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সিস্টেম; নেপথ্যে কি কাজ করেছে বড় ধরনের কোনো ষড়যন্ত্র– প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রযুক্তিবিদদের কাছে। সিস্টেম ক্র্যাশের কিছুক্ষণের মধ্যে মাইক্রোসফট বিবৃতি দিয়ে সাফ অবস্থা জানিয়ে দেয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্রাউডস্ট্রাইক আপডেট হওয়ার জন্যই সমস্যা উদ্ভব।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে কী আর কেনই বা এমন ক্রাউডস্ট্রাইক– প্রধানত সাইবার সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্ম, যা মাইক্রোসফট গ্রাহকের সব ধরনের নিরাপত্তায় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। প্ল্যাটফর্মটি মূলত সিঙ্গেল সেন্সর ও ইউনিফায়েড থ্রেট ইন্টারফেস পদ্ধতিতে কাজ করে। যার মাধ্যমে বেশ কয়েক ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘আইডেন্টিটি থ্রেট’ প্রতিহত করতে কাজ করে ক্রাউডস্ট্রাইক।
সহজে বললে, সাইবার আক্রমণ হলে সিস্টেম যেন হুট করেই হ্যাক না হয়ে যায়, তার নিরাপত্তা দিতেই পদ্ধতিটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে, যা প্রধানত সর্বাধুনিক সিকিউরিটি সিস্টেম। ঠিক যে কারণে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের গ্রাহকরা এটি নির্দ্বিধায় ভরসা করেন।
খবরে প্রকাশ, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ক্রাউডস্ট্রাইকের ফ্যালকন সেন্সরে ত্রুটি দৃশ্যমান হয়। ঠিক যার কারণে হুট করেই সারাবিশ্বে থমকে যায় মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ কার্যক্রম। দ্রুতই সমস্যার কথা স্বীকার করে নেয় কর্তৃপক্ষ। পরিষেবা স্বাভাবিক করতে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে কাজের বার্তা জানান মাইক্রোসফটের প্রযুক্তিবিদরা। দিনটি ছিল শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ কাজ করা বন্ধ করতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে হাজারো পোস্ট। দিশেহারা সবাই। ওই দিন কম্পিউটার আর ল্যাপটপ খুলতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে বিশেষ লেখা। আর তা হলো ‘ইয়োর ডিভাইস রান ইন্টু আ প্রবলেম অ্যান্ড নিডস টু রিস্টার্ট। উই আর জাস্ট কালেক্টিং সাম এরর ইনফো, অ্যান্ড দেন ইউ উইল রিস্টার্ট ইট ফর ইউ’। মূলত প্রযুক্তিবিদদের ভাষায়, যার সংক্ষিপ্ত নামান্তর নাম ‘ব্লু স্ক্রিন অব ডেথ’। যার কারণে বারবার রিসার্ট হতে থাকে সিস্টেম। ফলে কিছু সময়ের বিরতিতে প্রতিটি পিসি ও ল্যাপটপ ক্র্যাশ করে। মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায় সব ধরনের অসংরক্ষিত (আনসেভড ডেটা) তথ্য। মাইক্রোসফটের সিস্টেমে কারিগরি সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে ফ্লাইট পরিষেবা। বাতিল হয় একের পর এক ফ্লাইট শিডিউল, যা সংখ্যায় পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বহু বিমানবন্দরে বাধ্য হয়ে হাতে লেখা বোর্ডিং পাস বিলি করেন ফ্লাইট অপারেটরা। মাইক্রোসফট সাক্ষী হয় বিরল এক বিভ্রাটে।
ক্রাউডস্ট্রাইকের বিশেষ আপডেট সারাবিশ্বের আইটি সিস্টেমকে তাৎক্ষণিক প্রভাবিত করেছিল। সিস্টেম আপডেটের ইতিহাসে যা বড় ধরনের বিপত্তির উদাহরণ। দ্রুতই মাইক্রোসফট সমস্যা নিরসনে সর্বশক্তি নিয়োগ করে -সত্য নাদেলা নির্বাহী প্রধান, মাইক্রোসফট
- বিষয় :
- মাইক্রোসফট