ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

পদ্মা-মেঘনা থেকে ড্রেজার-বাল্কহেড নিয়ে সটকে পড়ছে বালুখেকোরা

পদ্মা-মেঘনা থেকে ড্রেজার-বাল্কহেড নিয়ে সটকে পড়ছে বালুখেকোরা

নদী থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ড্রেজার ও বালুবাহী বাল্কহেড- সমকাল

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২২ | ২২:৫২ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ | ০২:৫৬

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় শত শত ড্রেজার বসিয়ে গত কয়েক বছর ধরে চলা বালু ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত নৌযানগুলোকে জব্দ করা ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এই নির্দেশনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই পালাতে শুরু করেছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রের সদস্যরা। ধরা পড়ার ভয়ে চাঁদপুরের নদী সীমানা থেকে অন্তত চার শতাধিক ড্রেজার ও বাল্কহেড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে নদী রক্ষা কমিশনের অফিসিয়াল নির্দেশনা না পাওয়ায় বালুখেকোদের আইনের আওতায় আনতে তাদের বিরুদ্ধে নদীতে অভিযান চালাতে বিলম্ব হচ্ছে আইন জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

জেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্র। তবে সোমবার নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনার খবর পাওয়ার পর সোমবার রাত থেকেই চাঁদপুরের পদ্ম-মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত চার থেকে পাঁচ শত ড্রেজার ও বাল্কহেড সরিয়ে ফেলতে শুরু করে বালুখেকোরা। যদিও এখনও বিভিন্ন স্থানে কিছুসংখ্যক ড্রেজার বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, চাঁদপুরের পদ্ম-মেঘনায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার খবর শুনেছি। তবে এখনও আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা না আসায় আমরা অভিযান চালাতে পারছি না। আমরা নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। অফিসিয়ালি নির্দেশনা পেলেই আমরা আমাদের কাজ শুরু করবো।

নৌপুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জাটকা রক্ষা কার্যক্রমের সফলে আমরা এখনও নদীতে আছি। আগে যে পরিমাণ ড্রেজার এ অঞ্চলে দেখেছি আজ তা অনেক কম দেখা যাচ্ছে। নদীতে আগে ড্রেজার আর বাল্কহেডে ব্যস্ততম শহরের মতো থাকতো। এখন তার ১০ ভাগের এক ভাগেরও কম রয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদেরকে নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা মানতেই হবে। সেখান থেকে যে কোনো নির্দেশনা আসার পর আমাদের প্রস্তুতিরও একটা বিষয় থাকে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমরা নদী রক্ষা কমিশনের লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। সেটি এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এদিকে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সোমবার মিটিং হয়েছে। সেই মিটিংয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ-কালের মধ্যেই অফিসিয়ালি তাদেরকে চিঠি দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, নদীর অভিভাবক হিসেবে নদী রক্ষা কমিশন করা হয়েছে। আমাদেরকে জাতীয় স্বার্থ দেখতেই হবে। ইলিশ যদি একবার দিক পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে আমরা ইলিশ থেকে বঞ্চিত হবো। এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এ ধরনের অবৈধ কাজ করতে সহযোগিতা করে তারা জাতির শত্রু। অবিলম্বের নদী থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে। পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সবার সহযোগিতা নিয়ে বালু ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বাল্কহেড জব্দ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতদের আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দিয়েছি। 

২০১৫ সাল থেকে চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে ‘অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের’ অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। নদী ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী ওই চক্রটি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে একাধিক কল করে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।

আরও পড়ুন

×