ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

'দেশসেরা ঘুষখোর' নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুল

'দেশসেরা ঘুষখোর' নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুল

নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম

কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২ | ০৮:১৬ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ | ০৮:২০

নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে বিভিন্ন উপাধি মেলে। তবে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন অন্য ধরনের স্বীকৃতি। এ উপজেলার মানুষের কাছে তিনি 'দেশসেরা ঘুষখোর'। সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা আসন্ন।

শফিকুলের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবাদানের বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নতুন আইডি কার্ড করতে সরকারি কোনো ফি লাগে না। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ১১৫ থেকে ৩৪৫ টাকা ফি দিতে হয়। পরিচয়পত্র সংশোধনকারীরা সাধারণত বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে অফিসে আর কোনো লেনদেনের প্রয়োজন না থাকলেও শফিকুল ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা নেন।

বিদেশগামী নাগরিক বা বয়স সংশোধন সংক্রান্ত জটিল কোনো বিষয় হলে 'স্পেশাল রেট' নেন তিনি। শফিকুল জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্ট কপির জন্য ৩০০ টাকা করে নেন। ভুক্তভোগীরা জানান, শফিকুলের একটি দালাল চক্র রয়েছে। সাধারণ মানুষ হয়রানি এড়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেসব দালালদের আশ্রয় নেন।

এই শফিকুল ইসলামকে নিয়ে গত দু'দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। কারণ তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আইডি কার্ড সংশোধন করতে আসা একজনকে তিনি বলছেন, 'এসব টাকা ছাড়া হয় না।' ভুক্তভোগী আগেই তাকে ৩০০ টাকা দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে নির্বাচন অফিসার বলেন, 'সে টাকা চা খাওয়ার জন্য দিছেন। এতেই মনে করেন দেশ স্বাধীন করে ফেলেছেন?'

এ সময় তাকে তার ম্যানিব্যাগ বের করে টাকা ফেরত দেওয়ার ভান করতে দেখা যায়। তিনি এ কথাও জানিয়ে দেন, 'কাজ করলে আরও ২০০০ টাকা লাগবে।' এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী তার মোবাইল ফোন অন্য একজনকে ধরিয়ে দিলে, নির্বাচন অফিসারকে অন্য প্রান্তের ব্যক্তির সঙ্গে টাকার বিষয়ে দরদাম কষতে শোনা যায়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে রবিন আহম্মেদ নামে একজন মন্তব্য করেছেন, 'এই অফিসারের কাছে আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন তিন মাস লাগবে। পরে এক দালালের মাধ্যমে ২৫০০ টাকা দিয়ে অল্প সময়ে সংশোধনের কাজ করি।' ভিডিওটিতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করা হয়েছে হাজার খানেক। এতে আশিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন, 'আমিও এইখানে গিয়ে ১০০০ টাকা ঘুষ দিয়ে আইডি কার্ড করেছি।'

এদিকে কুলিয়ারচরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বদলি ঠেকাতে গত বৃহস্পতিবার শহরের রাজ সিনেমা হলের সামনে মানববন্ধন করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে কুলিয়ারচর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ হাসান সারোয়ার মহসিন বলেন, 'মানুষ ভোটার হওয়ার জন্য, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার জন্য নির্বাচন অফিসে যান। আর নির্বাচন অফিসার শফিকুল ইসলাম মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়। তার মতো ঘুষখোর সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয় আরেকটি আছে কিনা সন্দেহ।'

নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, শফিকুল প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানেও তিনি একই কারবার করতেন। কুলিয়ারচরে যোগদানের পর থেকে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের ব্যাপারে শফিকুলের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বারবার বলেন, 'আপনি আসেন সরাসরি কথা বলব।'

জেলা নির্বাচন অফিসার আশ্রাফুল আলম সমকালকে বলেন, 'ভাইরাল হওয়া ভিডিওর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়টি দৃশ্যমান হবে।'

আরও পড়ুন

×