ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

সালিশে ধর্ষণের শাস্তি হুজুর ডেকে ‘তওবা’ ও ৬০ হাজার টাকা জরিমানা

সালিশে ধর্ষণের শাস্তি হুজুর ডেকে ‘তওবা’ ও ৬০ হাজার টাকা জরিমানা

প্রতীকী ছবি

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ০৫:৫৬ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ০৫:৫৮

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মানিকগঞ্জে গ্রাম্য সালিশে আপোষ মীমাংসা করা হয়েছে। অভিযুক্ত আব্দুল মজিদ সমাজের কাছে ৬০ হাজার টাকা জরিমানার প্রতিশ্রুতি ও তওবা করে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রেহায় পেয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত এক সপ্তাহে আগে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া গ্রামে।

পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই শিশুটির মা জানান, তিন মাস আগে তার স্বামী বিদেশে যায়। একমাত্র ১২ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকেন। ১৫ দিন আগে প্রতিবেশী আব্দুল মজিদের বাড়িতে যায় তার মেয়ে। কৌশলে মজিদ তার মেয়েকে শ্লীলতাহানীসহ ধর্ষণ করে। বুদ্ধি কম থাকায় তার মেয়ে বাড়িতে আসার আগেই ঘটনাটি অনেকের কাছে বলে দেয়। মেয়ের কাছে ঘটনা শুনে মজিদের বাড়িতে গেলে উল্টো মজিদের মেয়ে খারাপ আচরণ করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে মেয়ের চাচাকে জানানো হয়। ঢাকা থেকে মেয়ের চাচা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা উপযুক্ত বিচারের কথা বলে এক সপ্তাহ পর ২৬ মার্চ রাতে সালিশের আয়োজন করেন। ওই সালিশে ভুক্তভোগী ও তার মাকে ডাকা হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনো জবানবন্দি।

শিশুটির মা বলেন, ‘শুনেছি দোষ স্বীকার করায় মজিদের ৬০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। তবে ওই জরিমানার টাকা কোথায় আছে জানি না।’ আইনগত ব্যবস্থা কেন নিলেন না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একদিকে অভিযুক্ত  মজিদের মেয়ের হুমকি, সমাজ লোকজন আর অন্যদিকে একা একজন নারী হয়ে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো ভেবে থানায় যাওযা হয়নি।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গত ২৬ মার্চ রাতে চাঁনু শিকদারে বাড়িতে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করা হয়। ওই সালিশের সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় আব্দুল করিম। সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, চাঁনু শিকদার, শুকুর শিকদার ও আব্দুল মজিদ, মেয়েটির চাচা মহিদসহ সমাজের ২০-২৫ জন ব্যক্তি। তিন সন্তানের জনক অভিযুক্ত আব্দুল মজিদকে (৫৬) দোষী সাব্যস্ত করা হয় সালিশে। সমাজপতিদের রায়ে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা ও তওবা করার সিদ্ধান্ত হয়। সালিশের রাতেই হুজুর ডেকে তওবা করানো হয় অভিযুক্ত মজিদকে আর জরিমান টাকা পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয় এক মাসের।

এ বিষয়ে হাটিপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম জানান, ১২ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মেয়েটির চাচা মহিদ সমাজের কাছে বিচার চান। এর পর ২৬ মার্চ রাতে সমাজের লোকজন নিয়ে বিচার করা হয়। বিচারের ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এক মাস পর জরিমানার টাকা দিলে মেয়ের পরিবারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি মেয়েটির মা ওই টাকা না নেন, তবে ওই টাকা সমাজের কাছে রেখে দেওয়া হবে।

ধর্ষণের বিচার গ্রাম্য সালিশে করা যায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আইনে নেই তা জানি, তবে সমাজের নিজেদের মধ্যে ঘটনা বলে এমনটি করা হয়েছে। এতে অন্যদের শিক্ষা হয়েছে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কেউ পার পাবে না।’

মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল রউফ সরকার জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা তার জানা নেই। কেউ লিখিত বা মৌখিক ভাবে জানায়নি।

ওসি বলেন, ধষর্ণের ঘটনায় আপোষ মীমাংসা করার কোনো সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×