ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মুক্ত আকাশে ডানা মেললো ১৯ 'প্রকৃতির ঝাড়ুদার'

মুক্ত আকাশে ডানা মেললো ১৯ 'প্রকৃতির ঝাড়ুদার'

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ০৬:২৫ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ০৬:৪১

শীতের সময়ে প্রচণ্ড ঠান্ডার সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে না পেরে হিমালয় থেকে পাদদেশের এলাকাগুলোতে ছুটে আসে প্রকৃতির ঝাড়ুদার খ্যাত শকুন। কিন্তু দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ায় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময়ই তারা অসুস্থ হয়ে যায়। এতে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় অসুস্থ অবস্থায় অনেক শকুন উদ্ধার হয়। এর মধ্যে যেসব শকুন প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় আকাশে। আর যেসব শকুনের সুস্থ হতে দীর্ঘমেয়াদী সময় লাগে তাদের শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে তাদের অবমুক্ত করে দেয়া হয় মুক্ত আকাশে।

এভাবেই গত ৮ বছর ধরে কাজ করছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র। এটিই দেশের একমাত্র শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র ১৯ শকুনকে অবমুক্ত করেছে। এর আগেও চলতি বছরে বিভিন্ন সময়ে ১৩টি শকুন অবমুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, গত এক বছরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা মোট ৩২টি শকুন মুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লা হারুন। এদিন ২টি শকুন মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। এরপর বাকি শকুনগুলোকেও পর্যায়ক্রমে অবমুক্ত করা হয়।

এসময় বন সংরক্ষণ ও প্রকল্প পরিচালন উপ-প্রধান গোবিন্দ রায়, আইইউসিএন কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ রাকিবুল আমিন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ, বন সংরক্ষক আমিনুল ইসলাম, রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমদ নাইমুর রহমান, রংপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাতলুবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আবর্জনা ও মৃত প্রাণী খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখায় শকুনকে বলা হয় প্রকৃতির ঝাড়ুদার। তবে বিভিন্ন কারনে বর্তমানে বাংলাদেশে শকুনের দেখা মেলে না। শকুনের বেশিরভাগ বসবাস হিমালয়ের দেশে। সেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দিলে এবং বিশেষ করে শীতের সময়ে ঠান্ডার সাথে লড়াই করতে না পেরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় উড়ে আসে এসব শকুনা। কিন্তু দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসায় অনেক শকুন অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়। এ সময় অনেকেই বন বিভাগকে খবর দেয়। বনবিভাগ সেসব শকুনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ফলে যেসব শকুন সুস্থ হয়ে যায় তাদেরকে অবমুক্ত করে দেওয়া হয়। আর যেসব শকুনের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তাদের দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যান বা শাল বনে শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়া শকুনদের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে।

শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্রটির তথ্যমতে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব শকুনের পরিণতি হয় মৃত্যু। অনেক ক্ষেত্রে অসুস্থ অবস্থায় মৃতু হয়। তবে সিংড়া ফরেস্টে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সিংড়া ফরেস্ট থেকে প্রতি বছর উদ্ধারকৃত ২০ থেকে ২৫টি শকুন সুস্থ করার পর অবমুক্ত করা হয়। গত ৮ বছরে অন্তত ১৪৯টি শকুন অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করার পর তাদের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার পর মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×