বরিশালে বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা

শনিবার বিকেলে রূপাতলী বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন মেয়র অনুসারী শ্রমিকরা। ছবি: সমকাল
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০৭ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:৫১
বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিতে শনিবার বিকেল থেকে টার্মিনাল এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। শনিবার বিকেলে এক পক্ষের হামলায় সেলিম সিকদার নামে অপর পক্ষের এক শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। পরে এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ উত্তেজনা অব্যাহত থাকে।
আহত সেলিম সিকদারকে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিটির লাইন সম্পাদক এবং নগরীর কালিজিরা এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে অপর পক্ষ। বরং এই পক্ষটি উল্টো অভিযোগ করে, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলে হামলা করেছে বিরোধী পক্ষ।
শ্রমিকদের একটি সূত্র জানায়, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এই দুই পক্ষের একটি বরিশাল সদর আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের এবং অপর পক্ষটি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
গত ১৫ মার্চ থেকে দু’পক্ষই প্রতিদিন টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে মহরা দিতে থাকে। এজন্য টার্মিনালে বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয়। প্রথমে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করলেও, পরে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা মেয়র অনুসারীদের কমিটিকে অবৈধ এবং নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ সমকালকে বলেন, ‘মেয়র অনুসারীরা বহিরাগতদের নিয়ে আমার লোকদের ওপর হামলা করেছেন। এ সময় বাসস্ট্যান্ডে থাকা সেলিম সিকদারকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন তারা।’
শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেলিম শিকদার অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মনির মোল্লা ও মীর রনির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছেন।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র অনুসারী হিসেবে পরিচিত বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘শনিবার দুপুরের পর শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাস মালিক সমিতির নেতাদের উপস্থিতিতে সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে আমরা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অবস্থান নিই। পরে চাঁদাবাজি বিরোধী মিছিল বের করলে সুলতান মাহমুদের লোকেরা আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে।’
এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আজিমুল করিম বলেন, ‘দু’পক্ষই রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করেছেন। তবে সেখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।’
উল্লেখ্য, বরিশালের রূপাতলী টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলার প্রায় ৩০টি রুটে প্রতিদিন ১১১টি বাস যাত্রী পরিবহন করে। দিনে ট্রিপ হয় ৬০০। শ্রমিক ইউনিয়নের নামে প্রতিটি ট্রিপ থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে প্রতিদিন আদায় হয় ১৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া রূপাতলী টার্মিনালের ওপর দিয়ে যাওয়া প্রতিটি দূরপাল্লার পরিবহন থেকে আদায় করা হয় ১০০ টাকা করে। শ্রমিকের কল্যাণের নামে নেওয়া হয় আরও চাঁদা। এসব কারণে রূপাতলী বাস টার্মিনাল ‘সোনার ডিম দেওয়া রাঁজহাস’ হিসেবে পরিচিত। এজন্য শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ক্ষমতাসীন দলের দু’পক্ষই টার্মিনালটির কর্তৃত্ব পেতে মরিয়া।