হিলিতে হঠাৎ অস্থির চালের বাজার

হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২২ | ০৮:১৭ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২২ | ০৮:১৭
হিলিতে আমদানি বন্ধের অজুহাতে চালের দাম বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে। স্থলবন্দরের মোকামে কয়েকদিনের ব্যবধানে আমদানি করা চাল কেজিতে ৮-১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার দেশি সব ধরনের সরু চালও কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। রমজানের শুরুতে চালের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
এদিকে পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় কিছু অসাধু অটোচাল মিল মালিক এবং আমদানিকারক তাদের নিজস্ব গুদামে চাল মজুত করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এজন্য পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দেশি মোটা চাল আগের দামে বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার গত বছর আমদানির ওপর বিদ্যমান থাকা শুল্ক্ক ৬২.৫০ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেয়। এরপর আমদানিকারকরা ভারত থেকে নন-বাসমতি চাল আমদানি করে। এই সুবিধায় সর্বশেষ তারা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চাল আমদানি করেছে। কিন্তু সরকার চালের শুল্ক্ক ফের ৬২.৫০ শতাংশ আরোপ করায় মার্চ মাস থেকে লোকসানের ভয়ে চাল আমদানি বন্ধ রাখা হয়। শুল্ক্ক বেশির কারণে কেউ চাল আমদানি করছে না।
তিনি আরও জানান, বর্তমান শুল্ক্ক দিয়ে এবং ৩৫০ ডলারে ভারত থেকে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজি ৫৪-৫৫ টাকা পড়ছে। যদি ২৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে আমদানি হয় তাহলে পড়বে ৪৪-৪৫ টাকা। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, রমজানে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও ডিউটি কমিয়ে আমদানির অনুমতি দেওয়া হোক।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আমদানিকারক ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে আমদানি করা জয়ন্তীভোগসহ কয়েক ধরনের মিনিকেট চাল ৪/৫ দিন আগে বিক্রি হয় ২৫ কেজির বস্তা ১৫৫০ টাকায়। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৭৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ৮-১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আগের আমদানি করা চাল বাজারে না ছেড়ে বন্দরে তাদের নিজস্ব গুদামে মজুত করেন। সেই চাল আমদানিকারকেরা দাম বাড়িয়ে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে ছাড়তে শুরু করেছেন। ফলে দামের প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা চালের মোকামে।
বাংলাহিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী পলাশ কুমার বসাক জানান, দেশি সব ধরনের সরু চালের কেজি ৬-৭ টাকা বেড়েছে। আগে যে চাল ৫৬-৫৮ টাকায় বিক্রি হতো; এখন বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৪ টাকায়। ভারতীয় আমদানি করা মিনিকেট চাল (২৫ কেজির বস্তা) কেজিতে ৮-১০ টাকা বেশিতে কেউ কেউ বিক্রি করছেন।
আরেক চাল ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন জানান, অটোচাল মিল মালিকরা যখন দেখল চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে তখন থেকে তারা গুদামে মজুদ করা শুরু করে। এখন তারা সরু চাল বেশি দামে বিক্রি করছে। বাজারে ওএমএস চালু থাকলেও চালের দাম বাড়তির দিকে।
চাল কিনতে আসা নুর হোসেন, জলি বেগম জানান, প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়ছে। ৪০ টাকার চাল ৪৪-৪৬ টাকায় এবং ৫৬ টাকার চাল ৬২-৬৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত রমজানের আগেই বাজার মনিটর করা।
ভ্যানচালক আমিরুল জানান, রমজান শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ীরা খেয়াল খুশিমতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এসব চাপ সামলাতে হচ্ছে আমাদের মতো গরিব মানুষদের।
সম্প্রতি দিনাজপুর জেলা প্রশাসন চালসহ যেকোনো ভোগ্যপণ্য যাতে কেউ মজুত করতে না পারে সেজন্য অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও তার বাস্তব চিত্র হিলি স্থলবন্দরে দেখা যায়নি। ফলে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, কোনো ব্যবসায়ী চাল আমদানির পর বেশি দামের আশায় মজুত করেছেন এমন অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চলমান আছে। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।