ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

প্রধান শিক্ষককে যুবলীগ নেতার হুমকি

আপনি যশোর থাকতে পারলে চুড়ি পরে ঘুরব

আপনি যশোর থাকতে পারলে চুড়ি পরে ঘুরব

যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম। ছবি-সংগৃহীত

যশোর অফিস

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২ | ০৫:০২ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ | ১১:২৭

যশোর সদরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। গত ২৪ মার্চ ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি গালিগালাজ করেন সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম। তাদের কথোপকথনের অডিওটি সোমবার ফেসবুকে ফাঁস হয়।

৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের অডিওতে মাজহারুল স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের ডিও লেটার অনুযায়ী কাজ না করায় শিক্ষক রবিউলকে যশোরছাড়া করার হুমকি দেন। তাকে চাকরিচ্যুত করার কথাও বলেন। এ ছাড়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন মাজহারুল।

ওই ঘটনার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন শিক্ষক রবিউল। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন। 

যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি রুপন কুমার সরকার জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে পুলিশ। এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গত ৩১ মার্চ যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় শিক্ষক রবিউল তার জিডিতে উল্লেখ করেন, ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগের কমিটিকে না জানিয়েই যুবলীগ নেতা মাজহারুল ও তার সহযোগীরা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনিরুজ্জামান নামের একজনকে নিযুক্ত করেন। পরে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা সেই কমিটির ওপর অনাস্থা আনাসহ একজন অভিভাবক হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন। এর মধ্যে গত ২৪ মার্চ দুপুর ২টার দিকে মাজহার তার মোবাইল নম্বর থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে বলেন। তাকে কমিটির বিষয়ে মামলা চলছে জানালে গালিগালাজসহ জীবননাশের হুমকি দেন।

ফাঁস হওয়া অডিওর একটি পর্যায়ে মাজহারুলকে বলতে শোনা যায়, ‘শুনেন স্যার, আমি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারব না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার সঙ্গে কথা বলবেন না; কী বলবেন আপনি জানেন। আপনার কোন... (অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ) আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির যদি আবেদন না করেন, তাহলে আপনি যদি যশোর থাকতে পারেন; তার পরে আমি চুড়ি পরে এ যশোরে ঘুরে বেড়াব।’

এরপর গালির পাশাপাশি হত্যার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দুই বছর ভালো ব্যবহার করেছি। তোমার কিডা ঠেকাই আমি দেখবানে। তোর এত বড় সাহস, তুই কাজী নাবিল আহমেদের ডিও লেটারে মামলা করেছিস। তোর কিডা আছে। তুই আজকের পর থেকে নীলগঞ্জে কীভাবে থাকিস দেখবানে। তোর লোকজন পুলিশ-র্যা ব নিয়ে থাকিস। আমি আসছি।’

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। স্কুলে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। ফোন বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে যুবলীগ নেতা মাজহারুল বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনিরুজ্জামানকে নিযুক্ত করতে ডিও লেটার দিয়েছেন। তার পরও নিজের খামখেয়ালিতে প্রধান শিক্ষক কমিটির আবেদন করছেন না। আমি স্থানীয় এমপির এই ইছালি ইউনিয়নে প্রতিনিধিত্ব করি। বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলেও তিনি মামলার অজুহাত দিয়ে কমিটির আবেদন করছেন না।

তিনি দাবি করেন, শিক্ষক রবিউলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্কুলে না থেকে বিমা কোম্পানির কাজ করে বেড়ান। তাই উত্তেজিত হয়ে ওই শিক্ষককে রাগের মাথায় কিছু কথা বলেছেন। তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটিতে কিছু বিষয় এডিট করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×