দুই কৃষকের বিষপান: বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন পরিবারের

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ০৫:৪৪ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ০৫:৪৪
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামে বিষপানে দুই আদিবাসী কৃষক মারা যাওয়ার ঘটনার বিচার দাবি করেছে তাদের পরিবার। শনিবার এ দাবিতে নগরীর কাজীহাটা এনজিও ফোরাম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পরিবার দু’টি। ‘রক্ষাগোলা সমন্বয়’ কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। গত ২৩ মার্চ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের সেচের পানি না পেয়ে অভিমান ও ক্ষোভে বিষপান করেন নিমঘুটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি। অভিনাথ মার্ডি ওইদিনই মারা যান আর রবি মার্ডি ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গোদাগাড়ী রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত সাওরীয়া। এ সময় বিষপানে মারা যাওয়া কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম, একই ঘটনায় মারা যাওয়া আরেক কৃষক রবি মার্ডির ভাই সুশীল মার্ডি উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রঞ্জিত সাওরীয়া বলেন, ‘গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই সেচের পানি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি সেগুলোর কোনো তোয়াক্কায় করেননি। গভীর নলকূপের আওতাধীন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কৃষকদের দেরিতে পানি দেওয়া হতো। অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি প্রায় ১২-১৫ দিন ধরে ধানের জমিতে পানি সেচের কথা নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে বলে আসছিলো কিন্তু তাদের জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তাই রাগে, অভিমানে ও ক্ষোভে তারা দু’জন আত্মহত্যা করে।’
তারা আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি দুই কৃষকের আত্মহত্যার পেছনে সাখাওয়াত হোসেনের মতো জাতিবিদ্বেষী ও দুর্নীতিবাজ ডীপ অপারেটর যেমন দায়ী ঠিক তেমনি এই বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা বিএমডিএ’র অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম সমানরূপে দায়ী। ঘটনার পরে সাখাওয়াত হোসেনের নামে গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা ও অবহেলা ছিল। পুলিশ ঘটনাকে অন্যখাতে নিতে চেয়েছিল। এজন্য ঘটনার দুইদিন পর আমরা মামলা করতে পারি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে সাখাওয়াত হোসেনের অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। বিএমডিএ থেকে পানির দাম ১২৫ টাকা ঘণ্টা নির্ধারণ করা হলেও সাখাওয়াত ১৩৫ টাকা ঘণ্টা দরে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতেন। এই অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চললেও কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। কোনো তদারকিও ছিলো না।’
আরও অভিযোগ করা হয়, ‘সাখাওয়াত হোসেন গভীর নলকূপের ট্রান্সমিটার পাহারা দেওয়ার নামে প্রতি মৌসুমে কৃষকদের কাছে থেকে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং চেম্বার মেরামতের নামে ৫০ টাকা করে উত্তোলন করতেন। পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে আদিবাসীদের সঙ্গে বৈষম্য করতেন।’
সংবাদ সম্মেলনে তারা বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবি গুলো হলো- অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যায় প্ররোচণার দায়ে সাখাওয়াত হোসেনকে বিচারের মাধ্যমের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জন্য বিএমডিএ কর্তৃপক্ষকেও তদন্তের আওতায় এনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে, বরেন্দ্র অঞ্চলে নলকূপ পরিচালনার ক্ষেত্রে কৃষকবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নলকূপ অপারেটর হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ও প্রান্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।