ফেঞ্চুগঞ্জ
ডলির স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন ফেঞ্চুগঞ্জের ডলি বেগম সমকাল
মামুনুর রশীদ, ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৫ মে ২০২২ | ০০:১৫
'কেচোঁ খুঁড়তে সাপ' প্রবাদটি যেন ডলি বেগমের ক্ষেত্রে 'কেঁচো থেকে সোনা'য় রূপান্তরিত হয়েছে। কেননা কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নারায়ণপুর গ্রামের এই সংগ্রামী নারী।
ডলির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০ বছর আগে উপজেলার উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের দিনমজুর বিলাল উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের সংসারে অভাব লেগেই থাকত। দু'বেলা ঠিকমতো আহার জুটত না। এর মধ্যেই জন্ম হয় এক ছেলে ও এক মেয়ের। কী করে তাঁরা বাঁচবেন তা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখছিলেন ডলি। শেষ পর্যন্ত আলোর দেখা পেলেন। আরডিআরএস সূচনা প্রকল্পের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সমন্বয়কারী জসিম উদ্দিন তালুকদারের পরামর্শে ও সহযোগিতায় ২০২০ সালে প্রকল্পের জসিম উদ্দিন তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শেখেন ডলি।
'মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করি। উৎপাদিত সার প্যাকেটজাত করে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে আহমদ ট্রেডার্সে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।' বলছিলেন ডলি। এরপরই শুরু তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। এক বছরে ধৈর্য এবং সততার সঙ্গে নিজের কাজ করে যাওয়ায় এখন তাঁর দুঃখের দিন পাল্টে গেছে। বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও বিক্রি করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। ডলি এখন নিজেই তাঁর সংসার সুন্দর করে সাজাচ্ছেন। সার বিক্রির টাকায় ২০২১ সালে একটি গাভি কেনেন। এ বছর তিনি একটি ছাগল কিনেছেন। গাভি ও ছাগল পালন করছেন।
ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করে তাঁর মাসিক আয় ৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া পেঁপে ও শাকসবজি বিক্রি করে তিনি আরও ৮ হাজার টাকা আয় করেন। ছেলে রাহাদ হোসেনকে পঞ্চম শ্রেণি ও মেয়ে আমিনা বেগমকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করেছেন স্থানীয় আলম রাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ডলি বেগম বলেন, 'একটি সিমেন্টের চাকে কেঁচো, গোবর ও আবর্জনা দিয়ে শুরু করি আমার জীবনযুদ্ধ। আমি সূচনা প্রকল্পের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন আমার চাক রয়েছে ছয়টি। এই চাক থেকে আরও তিন হাজার টাকার কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা যাবে।'
ডলি বেগম জীবন সংগ্রামে বিজয়ী মা হিসেবে ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও রোকেয়া দিবস ২০২১ উপলক্ষে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কার্যালয় থেকে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন।
সূচনা প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী জসিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, পুষ্টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ডলির সঙ্গে তাঁদের পরিচয়। কেঁচো সার উৎপাদন ও মুরগি পালন করার জন্য তাঁরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিজের প্রচেষ্টায় তিনি স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুব্রত দেবনাথ বলেন, শাকসবজি ও ফলমূলে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ফসলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ সার বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
- বিষয় :
- শ্রেষ্ঠ জয়িতা
- ভার্মি কম্পোস্ট
- কেঁচো সার