৪০ এতিম কন্যার বিবাহোত্তর সংবর্ধনা

ছবি: সমকাল
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২২ | ১১:৪৩ | আপডেট: ২৭ মে ২০২২ | ১১:৪৩
একসঙ্গে ৪০ বর ও ৪০ কনে। পাশাপাশি বসে আছেন তারা। অন্যপাশে অতিথিরা বসেছেন। সবাই দুই হাত তুলে দোয়া করছেন নববিবাহিতদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। যারা কনে সেজেছেন তারা সবাই এতিম। যারা বর সেজেছেন তাদের কেউ গার্মেন্টে, কেউবা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। অনেকে আবার কৃষি কাজ করেন। তাদের বিয়ে হয়েছে যৌতুকবিহীন। শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ির গ্রিনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে এই গণবিয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দৃশ্যটা ছিল এমনই।
ব্যতিক্রমী এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছিল দিনাজপুর শিশু নিকেতন (এতিমখানা)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী জয়নুল আবেদিন, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম, শিশু নিকেতন পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোজাফ্ফর আলী মিলন প্রমুখ। সংবর্ধনা শেষে বরদের জন্য একটি করে বাইসাইকেল, কনেদের জন্য একটি করে সেলাই মেশিন ও সংসারের আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কথা হয় কনে ইয়াসমিন আরার সঙ্গে। তার বিয়ে হয়েছে জেলার পার্বতীপুরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই আমার শিশু নিকেতনের জীবন শুরু। ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ৯ বছর। এখান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, এবার বিয়েও হলো। শিশু নিকেতন আমাদের মায়ের আদলে গড়ে তুলেছে। আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। এ সুযোগ না পেলে হয়তো এতদূর আসা হতো না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন; আমরা যেন সুখে-শান্তিতে বাকি জীবনটা কাটাতে পারি।
তার স্বামী বলেন, এটি শিশু নিকেতনের মহৎ উদ্যোগ। আমি কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। দোয়া করবেন- আমাদের সংসার জীবন যেন সুখকর হয়।
শিশু নিকেতনের সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন জানান, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৯ সালে ১০ এতিম বালিকাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এখানে এতিমদের বিভিন্ন কাজে দক্ষ করার পাশাপাশি এইচএসএসি পর্যন্ত পড়ালেখা করিয়ে ১৮ বছর হলে ভালো পাত্র দেখে যৌতুকবিহীন বিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৯ সালে একসঙ্গে ২০ এতিম মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর করোনার কারণে এ আয়োজন বন্ধ ছিল। তবে ৪০ এতিম মেয়ের বিয়ে ২০১৯ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। তাঁরা সবাই সাবলম্বী। এ নিয়ে ১৭৪ কন্যাশিশুকে উপযুক্ত করে বিয়ে দেওয়া হলো। বর্তমানে এখানে কন্যাশিশু আছে আরও ১০৬ জন।
হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, এতিমদের পাশে সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। আজকে যাদের সংবর্ধনা দেওয়া হলো তাদের কারও কর্মসংস্থানের প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করা হবে।