ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

গোবিন্দগঞ্জের সামাজিক বনায়ন

১৭ হাজার গাছ কেটে সাবাড়

১৭ হাজার গাছ কেটে সাবাড়

কাটাবাড়ীর আসকুর গ্রামের সড়কের গাছ কেটে নিচ্ছেন শ্রমিকরা- সমকাল

এনামুল হক, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ৩০ মে ২০২২ | ০৩:৪৯

গোবিন্দগঞ্জে সামাজিক বনায়নের ১০ হাজার এবং ৩৩ কিলোমিটার সড়কের ৭ হাজার গাছ অবৈধভাবে কাটা হয়েছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টসহ জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

জানা গেছে, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে উপজেলার তালুককানুপুর, গুমানীগঞ্জ, রাজাহার, কাটাবাড়ী, নাকাই, ফুলবাড়ী, কামদিয়া ও সাপমারা ইউনিয়নের রাস্তায় রোপণ করা প্রায় ১০ হাজার গাছ দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা হয়েছে। গত এক মাসে এসব গাছ কাটা হয়। গাছগুলোর মূল্য দেড় কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলার বিভিন্ন সড়কের ৭৪ কিলোমিটার রাস্তার দু'পাশে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল। গাছগুলো বেড়ে উঠে শোভা বর্ধনসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছিল। কিন্তু গাছখেকোদের নজর পড়লে তারা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে অবৈধ পন্থায় গাছ কাটা শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের ঘুষ দিয়ে গাছগুলো কেটে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করা হচ্ছে।

সরেজমিন জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের কামারপাড়া থেকে বাগদা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার; হরিরামপুর ইউনিয়নের গামার খাল থেকে শিবের বাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার; সাপমারা ইউনিয়নের কাটামোড় থেকে সাহেবগঞ্জ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার; চক রহিমাপুর মাদ্রাসা থেকে বৈরাগী শ্মশানঘাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার; রাজাহার ইউনিয়নের আতাহার সেতু থেকে দুবলাগাড়ী হয়ে বেউরগ্রাম ও কুকরাইল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার; হরিনাথপুর থেকে ফকিরপাড়া বাঁধ বাগান পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার; নাকাই-গাইবান্ধা সড়কে কৃষ্টপুর থেকে ধর্মপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কে থাকা গাছ দুর্বৃত্তরা কেটে নিয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, গাছ কাটতে বাধা দিলেও দুর্বৃত্তরা কোনো কথা শোনেনি। তারা জোর করে গাছ কেটে নিয়ে যায়, যেগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক পৌনে ২ কোটি টাকা। গাছগুলো কাটার ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নিয়মই মানা হয়নি।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা পল্লব সরকার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে দরপত্র ছাড়াই অবাধে গাছ কাটা হয়। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলে না। এর ফলে গাছ কাটতে তাদের উৎসাহ বেড়ে যায়। এত গাছ কাটায় পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে।
কামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী বাবলুর দাবি, গাছ কাটতে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। বিধি মোতাবেক গাছগুলো কাটা হয়েছে।

তালুককানুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিকের ভাষ্য- বাসুদেবপুর বাজার থেকে তেলিয়া গ্রামের রাস্তার টেন্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু টেন্ডারের বাইরেও কিছু গাছ কাটা হয়েছিল। সে জন্য প্রশাসন তাদের নামে মামলা দিয়েছিল। এ ছাড়া অনিয়ম করে কোনো গাছ কাটা হয়নি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তাঁর মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও জবাব মেলেনি।

এত সংখ্যক গাছ কাটায় পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে; জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহ-উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে পারবেন না। গাছগুলো দেখভালের জন্য বন বিভাগ রয়েছে। এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কর্তৃত্ব নেই।
গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এমএ মতিন মোল্লা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মাটির ক্ষয় রোধ, পানির স্তর নিচে নেমে যেতে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় ঠেকাতে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। প্রশাসনের নাকের ডগায় গাছখেকোরা গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। অথচ প্রশাসন নীরব! এতটি গাছ কেটে ফেলায় পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে বলে তাঁর আশঙ্কা।

গোবিন্দগঞ্জ বন বিভাগের ফরেস্টার মিজানুর রহমানের দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছগুলো কাটা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কেউ অনিয়ম করে গাছ কেটে থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×