ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

প্রশিক্ষণে যোগদান হলো না শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক আউয়াল হোসেনের

প্রশিক্ষণে যোগদান হলো না শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক আউয়াল হোসেনের

শিক্ষক আউয়াল হোসেন সরদার

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২২ | ১০:০৮ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ | ১০:০৮

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা হলো না প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক আউয়াল হোসেন সরদারের। প্রতিবন্ধিতার কারণে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাস্টার ট্রেইনারের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাকে।

জানা যায়, রোববার থেকে তার প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। অথচ শুক্রবার আউয়ালের নাম বাদ দিয়ে চিঠি ইস্যু করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন।

প্রশিক্ষণে অংশ নিতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা এই শিক্ষক। তিনি পার্বতীপুর উপজেলার পৌর শহরের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক।

জানা যায়, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি দূর করতে পদক্ষেপ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক বাছাইয়ের পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও ব্রিটিশ কাউন্সিল ইংরেজি মাস্টার ট্রেইনার বাছাই করতে সারাদেশ থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে দুই হাজার শিক্ষক বাছাই করে। নির্বাচিত শিক্ষকরা ১৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে সারাদেশের শিক্ষকদের ইংরেজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। এ লক্ষ্যে গত ২৬ মে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কোহর্ট ৪-এর আওতায় মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে দিনাজপুর পিটিআইতে প্রশিক্ষণার্থীদের চূড়ান্ত তালিকায় আউয়ালের নাম পাঠান। চিঠি পেয়ে গত ৩০ মে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে কভিড টেস্ট করান তিনি। হঠাৎ ৩ জুন আউয়ালের নাম বাদ দিয়ে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার মধ্য চাটনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল করিমকে অন্তর্ভুক্ত করে চিঠি ইস্যু করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

আউয়াল হোসেন সরদার বলেন, তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে দেড় বছর মেয়াদি ডিপিএড প্রোগ্রাম এবং আইসিটি ইন এডুকেশন ট্রেনিংও পিটিআই থেকে সম্পন্ন করেন। অথচ মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে সামনে এনে মাস্টার ট্রেইনার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাঁকে। এক্ষেত্রে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার অপরাধ, আমি উচ্চতায় খাটো এবং খুঁড়িয়ে হাঁটি।’

দিনাজপুর টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষক জনি দাস বলেন, মাস্টার ট্রেইনার নির্বাচন পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে মেধার মূল্যায়ন হয়েছে কিন্তু শারীরিক ফিটনেস দেখার সুযোগ ছিল না। প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষের মতামত নেওয়া হয়। আউয়াল উচ্চতায় সাড়ে তিন ফুট এবং ধীরে ধীরে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। দুই বা তিনতলায় ওঠানামা করা কষ্টকর হবে বলে তার নাম বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন চাওয়া হয়।

টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ ওমর আলী বলেন, সহকারী শিক্ষক আউয়াল হোসেন সরদার শারীরিকভাবে ফিট নয়, এ কারণে তাকে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। তার উচ্চতা কম এবং হাঁটতে সময় লাগে। প্রশিক্ষণে কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে তাকে ডেকে নেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করার পরও শেষ মুহূর্তে কেন তাকে বাদ দেওয়া হলো এ ব্যাপারে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, চাকরিবিধি অনুযায়ী উচ্চতা কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধিতা কোনো সমস্যা নয়। কেননা প্রতিবন্ধী হলেও তার সরকারি বিদ্যালয়ে চাকরি হয়েছে। তার মাস্টার ট্রেইনার হতে কোনো সমস্যা নেই। তবে কী কারণে টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ তাকে বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষক চেয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেছিলেন তা তার জানা নেই।

আরও পড়ুন

×