ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা, বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী

সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা, বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী

সিলেট ব্যুরো ও সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২ | ০২:৫৬ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২২ | ০৩:১৪

ভয়াবহ বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক তলিয়ে গেছে। সারা দেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছে না। এমন অবস্থায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে কয়েকটি উপজেলায় সেনাবাহিনী নামানো হচ্ছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান।

সিলেট নগরীসহ পাঁচ উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আড়াই শ বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকাই শুক্রবার পানিতে তলিয়ে গেছে। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকাও পানিবন্দি। সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় পানি বাড়ছে। নগরীর অনেক এলাকা এখন পানির নিচে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার এবং সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। পানির উচ্চতা বেড়েছে কুশিয়ারা ও লোভা নদীরও। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপরে বইছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৪৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে; দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল জানান।

সিলেট জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘এ পর্যন্ত জেলায় ২৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।’

এছাড়া জেলার ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ওয়াদুদ।

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ জানায়, কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই মুহূর্তে সুনামগঞ্জের সবার ঘরে পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে সিলেটের কুমারগাওয়ের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রেও। এই উপকেন্দ্র দিয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ইতোমধ্যে সিলেটের পুরো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়ইঘাট উপজেলা এবং নগরীর উপশহরসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সুরঞ্জিত সিংহ বলেন, ‘কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডে পানি প্রবেশ করেছে। যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করতে বেশি সময় লাগবে না। যদি কন্ট্রোল রুমে পানি প্রবেশ করে তাহলে এই গ্রিড উপকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে। এই গ্রিড বন্ধ করলে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।’

সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে সিলেট মহানগরীতে ৩১ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখনও অনেকেই নিজেদের আসবাবপত্র রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না। তবে বন্যাকবলিত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।’

আরও পড়ুন

×