ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ডোমারে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ

ডোমারে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ

সিয়াম আহমেদ

ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২২ | ০৬:১৬ | আপডেট: ২১ জুন ২০২২ | ০৬:১৬

নীলফামারীর ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রাহাত মাহমুদ মৃন্ময়ের সঙ্গে উপজেলা হেলিপ্যাড মাঠে সাইকেল চালানোর সময় পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্রের মারামারি হয়। এই দুই শিক্ষার্থী উপজেলা পরিষদ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। 

এই ঘটনায় কৃষি কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধর করে মাটিতে ফেলে বুকে পা চেপে ধরার অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সিয়াম আহমেদ। সে উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে।    

সোমবার বিকেলে এই ঘটনার পর সন্ধ্যায় উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে কিছু লোক হাঙ্গামা করলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই কৃষি কর্মকর্তা সরকারি কাজে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে ডোমার থানায় একটি মামলা করেন এবং একই ঘটনায় রাতে সৌরভ (২০) নামে অপর এক যুবককে তার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী এসএসসি পরিক্ষার্থী মুন্না ও একাদশ শ্রেণির ছাত্র জাহিনুর ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে মাঠে আমরা খেলছিলাম। মাঠেই মৃন্ময় ও সিয়াম সাইকেল চালানো নিয়ে মারামারি করে। এ সময় কৃষি কর্মকর্তার স্ত্রী সিয়ামকে টেনে হেঁচড়ে তাদের কোয়াটারের দিকে নিয়ে যায়। কৃষি কর্মকর্তা এসেও সিয়ামকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দিয়ে বুকের উপর পা চেপে ধরে। আমরা খেলা বন্ধ করে দৌড়ে গিয়ে থামানোর চেষ্টা করি। 

কৃষি কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরও কয়েকজনকে ধাক্কা দেয়। এরপর সিয়ামের বাবাসহ তার পরিবারের লোকজন এসে কৃষি অফিসে গিয়ে ছেলেকে মারধরের কারণ জানতে চায়। এ সময় সেখানে কিছুটা বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর পুলিশ এসে সিয়ামের বাবাকে আটক করে। সন্ধ্যায় সিয়ামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। 

সিয়ামের মা স্বপ্না আক্তার জানান, সিয়াম দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। তার খাদ্যনালি চিকন হয়ে যাচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পরলেও অসুস্থ থাকার কারণে তাকে খৎনা দেওয়া যায়নি। অপারেশনের জন্য তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা।

তিনি বলেন, আমার ছেলে ভুল করলে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অসুস্থ ছেলের বুকে লাথি মারেন। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে তিনি এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করেন। 

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে কি কারণে মেরেছে, মারধরের বিষয়টা জানতে চেয়ে কৃষি অফিসে আমার স্বামীসহ প্রতিবেশীরা যায়। আমার ছেলেকেই মারলো আবার উল্টো কৃষি কর্মকর্তার মামলায় আমার স্বামী হাজতে গেল। আমরা গরিব বলে কি বিচার পাবো না? আমার অসুস্থ ছেলে হাসপাতালে আর আমার স্বামী হাজতে। এখন আমি কি করবো?

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাহিদা বলেন, শিশুটির গায়ে ও বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। শিশুটিকে বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এই ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানার জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর তার সেলফোনে ফোন দেওয়া হলে ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া এটি ডোমার উপজেলা পরিষদের বিষয়। তারা বসে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম জানান, সোমবার সন্ধায় অফিসে এসে কিছু লোক হামলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সকালে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।

আরও পড়ুন

×