শুধু মন না, পকেটও ভরায় শাপলা

মনোজ সাহা, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ | ২২:৩০
বর্ষায় টইটম্বুর বিল। এ সময় বিল এলাকার মানুষের কোনো কাজ থাকে না। মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই বিলে জন্মাতে থাকে জলজ উদ্ভিদ শাপলা। নভেম্বর পর্যন্ত বিলের শোভাবর্ধন করে এ ফুল। বিলের পানির ওপর ছড়াতে থাকে শ্বেতশুভ্র আভা। এই সৌন্দর্যের পাশাপাশি এটির আরেকটি উপযোগিতাও রয়েছে। তা অর্থনৈতিক। জীবিকার তাগিদে বিল এলাকার মানুষ কাকডাকা ভোরে নৌকায় করে বিলে ফুল সংগ্রহে নামেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিঙ্গা গ্রামের বড় সিঙ্গা বিলের চিত্র এটি। এ গ্রামের ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ মানুষ বিল থেকে এ ফুল সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গ্রামে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ টাকার কেনাবেচা চলে এর। এখান থেকে পাইকাররা কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।
শাপলা সংগ্রহ ও বিক্রির সঙ্গে গ্রামীণ জনপদের অনেক মানুষ যুক্ত। তারা মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন। এই তথ্য কাশিয়ানির সিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের। তার তথ্য অনুযায়ী, শাপলা উৎপাদনে কোনো খরচ নেই। জলাধারে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে এ জলজ উদ্ভিদ।
সিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রিনা রানী সরকার (৫৮) বলেন, ভোর ৫টায় নৌকায় পান্তাভাত, মুড়ি অথবা চিড়া নিয়ে বিলে বেরিয়ে পড়েন। সকাল ৮টা পর্যন্ত তিনি ৩০০ শাপলা তুলতে পারেন। ডাঁটাসহ ১০টি ফুল দিয়ে একটি আঁটি বাঁধেন। ১০টি আঁটি দিয়ে একটি তোড়া করেন। আগে প্রতি তোড়া ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতেন। পদ্মা সেতু চালুর পর ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সে হিসাবে প্রতিদিন তাঁর আয় ৬০০ টাকা। বিলে নৌকা থেকেই পাইকার নগদ টাকায় শাপলা কিনে নেন। একটু শ্রম দিয়েই প্রতিদিন এ আয় করে সংসারের খরচ মেটাতে পারছেন।
একই গ্রামের সমর বিশ্বাস (৫৫) বলেন, বর্ষাকালে বিল জলমগ্ন থাকায় অনেকের কাজ থাকে না। তাঁরা বিল থেকে শাপলা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর তাঁরা ফুলের দাম বেশি পাচ্ছেন।
অতুল বিশ্বাস (৬০) বলেন, তাঁদের বিলে রক্ত, সবুজ ও শুন্দি এ ফুল জন্মায়। এর মধ্যে সবুজ শাপলা খেতে খুবই সুস্বাদু। বাণিজ্যিকভাবে এটির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ জাতটি একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। তিনি সকাল-বিকাল দুই বেলা বেছে বেছে বিল থেকে সবুজগুলো তোলেন। প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করতে পারেন।
পাইকার সুকুমার বিশ্বাসের (৪০) ভাষ্য, সিঙ্গা বিলের মিঠা পানির শাপলা খুবই সুস্বাদু। সারাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা। তাই এখান থেকে ফুলটি কিনে ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। ১০০ ফুল তাঁরা ২০০ টাকায় কিনে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন। পদ্মা সেতু চালুর পর ফুলটির চাহিদা ও দাম বেড়েছে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এর ব্যবসা চলে।
জেলার পাঁচ উপজেলায় বড়-ছোট ২২৯টি বিল ও জলাভূমি রয়েছে জানিয়ে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, প্রতিটি বিলে প্রচুর শাপলা জন্মে। এ জলজ উদ্ভিদটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, সিলিকন ও আয়োডিন রয়েছে। এ উপাদানগুলো মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। দেশে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এ জেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষ সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। গ্রামের মানুষ ফুলটি সংগ্রহ করে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
এ জেলায় প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার শাপলা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন অরবিন্দু কুমার রায়।