শ্রাবণের শেষদিনে ভাসল বরিশাল নগরী

বরিশাল নগরীর প্যারোরা রোডের বসতঘরে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের পানি।
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২২ | ১০:১৮ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২২ | ১০:২০
শ্রাবণের শেষদিনে রোববার বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসল বরিশাল নগরী। বৃষ্টি ও জোয়ারে পানি মিলে বিকেলে বরিশাল নগরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ছিল হাঁটুপানির নিচে। নগরের উঁচু কয়েকটি সড়ক ছাড়া সবই ডুবে ছিল। কোথাও কোথাও পানির পরিমাণ হাঁটুর ওপর অতিক্রম করেছে।
অপরদিকে টানা ৫ দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর পানি উপচে একের পর এক লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। অতি বৃষ্টি ও জোয়ারে পুরো দক্ষিণাঞ্চলেই জনদুর্ভোগ চলছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস সন্ধ্যা ৭টায় সমকালকে জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৭৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ২-৩ দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টি চলছে। অপরদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে নদনদীতে চলছে অস্বাভাবিক জোয়ার। যে কারণে নগরের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে।

রোববার বিকেলে নগরের প্রধান সড়ক সদর রোড, হেমায়েত উদ্দিন রোড, নবগ্রাম রোড বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সব সড়ক কীর্তনখোলার জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে। নগরের সড়কের একই অবস্থা। ড্রেন দিয়ে কীর্তনখোলার পানি মূল নগরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অঝোর ধারার বৃষ্টির পানি। রোববার সারাদিনই নগরে বৃষ্টিপাত হয়েছে। কীর্তনখোলার তীরবর্তী লোকালয় আমানতগঞ্জ, ভাটারখাল, পলাশপুরসহ অনেক এলাকায় বাসাবাড়ি কোমরসমান পানির নিচে তলিয়ে আছে।
নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগর সড়কের বাসিন্দা এম মিরাজ হোসাইনের বাসা থেকে চোখে দেখা দূরত্বে কীর্তনখোলা নদী। মিরাজ হোসাইন সমকালকে বলেন, বর্ষা মৌসুমের প্রতিটি আমবশ্যা-পূর্ণিমায় তাদের এলাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এবার পানির পরিমাণ বেশি।
মিরাজ আরও বলেন, জোয়ারের পানিতে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়। ভাটায় পানি নামা শেষ হওয়ার আগেই পুনরায় জোয়ার শুরু হয়। ফলে পরবর্তী জোয়ারে আরও উঁচু করে প্লাবিত হচ্ছে তাদের বসত এলাকা। বাংলাদেশ বেতার বরিশাল’র আঞ্চলিক পরিচালক কিশোর রঞ্জন মল্লিক বলেন, বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে বরিশাল বেতারের পুরো চত্বর ডুবে আছে।
নগরের ভাটিখানা সড়কের অসিত দাস জানান, তাদের এলাকার প্রায় সড়ক হাঁটু পরিমাণ পানিতে প্লাবিত হয়ে আছে। জোয়ারের সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টিতে এবার পানির পরিমাণ অনেক বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার অন্য উপজেলা ও ইউনিয়নে একই অবস্থা।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাউবো দক্ষিণাঞ্চলের নদনদীর ১০টি পয়েন্টে পানির পরিমাপ রেকর্ড করেছে। রোববারও সব পয়েন্টে পানির লেভেল বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এ নিয়ে টানা ৫ দিন যাবত দক্ষিণাঞ্চলে নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার কীর্তনখোলার পানির লেভেল ছিল বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপরে। সর্বাধিক উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে পাথরঘাটার বিষখালী নদীতে। সেখানে বিপৎসীমার লেভেল হচ্ছে ২ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার। রোবাবার এ নদীর পানি ৪ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই লেভেলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ভোলার তমুজদ্দিন উপজেলা-সংলগ্ন মেঘনা-সুরমা নদীর পয়েন্টে। সেখানে বিপৎসীমার লেভেল হচ্ছে ২ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার।
- বিষয় :
- জোয়ারের পানি
- বৃষ্টি