দেড় যুগ পর ঘুচছে বিভেদ

আবুল হোসেন রিপন, সোনাগাজী (ফেনী)
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২২ | ২৩:০৭
১৮ বছর পর ঐক্যের পথে হাঁটছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনায় গত সোমবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়। এতে নিজেদের সব বিরোধ মিটিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দলটির নেতারা। উপজেলা বিএনপির কয়েকটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সোমবারের সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র জামাল উদ্দিন সেন্টুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মঞ্জুর হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঁইয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক, ছাত্রদলের সভাপতি মাইনুল হোসেনসহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকরা।
দলীয় সূত্র জানায়, নানা বিষয় নিয়ে ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের অনুসারীদের সঙ্গে ২০০৩ সালে বিরোধ দেখা দেয় ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপির সভাপতি সাঈদ এস্কান্দারের অনুসারীদের। মোশাররফ হোসেনের পক্ষে অবস্থান নেন তৎকালীন উপজেলা সভাপতি ছিলেন জয়নাল আবদীন বাবলু, সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন খোকন, খুরশিদ আলম ভূঞার মতো নেতারা। অপরপক্ষে সাঈদ এস্কান্দারের পক্ষে ছিলেন গিয়াস উদ্দিন, জামাল উদ্দিন সেন্টুসহ অন্যরা।
অভ্যন্তরীণ বিভেদের জন্য বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একাংশ সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের ১৩ বছরের শাসনামলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ সক্রিয় শত শত নেতাকর্মী হামলা-মামলার শিকার হয়ে এলাকা ছেড়েছেন। রহস্যজনক কারণে গিয়াস উদ্দিনকে হয়রানির শিকার হতে হয়নি। দলীয় বিভেদের এই সুযোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক সময় বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকা সোনাগাজীর রাজপথ এখন তাদের হাতছাড়া। সমন্বয়হীনতায় কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিও সফলভাবে করতে পারেনি তারা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে তাদের ভুগতে হয়েছে। অবশেষে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে ঐক্যের সম্ভাবনায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মনে।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূইয়া বলেন, এত দিন নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। যে কারণে সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে এখন কোনো বিরোধ নেই। সব ভেদাভেদ ভুলে রাজপথে কেন্দ্রের দেওয়া সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের ঘোষণা দেন তিনি। তবে বাধা এলে কঠোরভাবে মোকাবিলারও প্রত্যাশা করছেন তিনি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টু বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগে কী হয়েছে- তা ভাবার সময় নেই। সব ভুলে শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিকরা এক কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে থাকবে। সেখানেই আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা
দেন তিনি।
তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ পাঠানো হলেও জবাব মেলেনি।