ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অধ্যক্ষের অনিয়মে স্বপ্ন চুরমার পরীক্ষার্থীর

অধ্যক্ষের অনিয়মে স্বপ্ন চুরমার পরীক্ষার্থীর

জিনারুল ইসলাম

চারঘাট (রাজশাহী) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৮:৪৮ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৮:৪৮

ঘড়িতে সকাল ১১টা। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কলমে তখন আগুন ঝরলেও কেন্দ্রের বাইরে এক শিক্ষার্থীর চোখ বেয়ে ঝরছিল অশ্রু। সে হাউমাউ করে কাঁদছিল আর বলছিল- আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এক দশকের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, অধ্যক্ষের অনিয়মে জীবনটা তছনছ হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাটের জোতকার্ত্তিক (কারিগরি) বিএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

ওই পরীক্ষার্থীর নাম জিনারুল ইসলাম। সে উপজেলার বালুদিয়াড় টেকনিক্যাল বিএম কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

জিনারুল বলে, নির্ধারিত সময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ নুরুল আমীনের কাছে ২ হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলাম। অন্য শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র পেলেও আমারটা না আসায় ফের প্রতিষ্ঠানে যাই। এরই মধ্যে ওই অধ্যক্ষ নানা অনিয়মের কারণে বরখাস্ত হন। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গেলে আমার প্রবেশপত্র কলেজে ছিল না বলে জানান। আগের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। অবশেষে সবাই ফাঁকি দিয়েছেন; প্রশেপত্র না পেয়ে পরীক্ষার হলেই ঢুকতে পারিনি।

জিনারুল জানায়, তার বাবা একজন ভ্যানচালক। সে একমাত্র ছেলে। পরিবারের অর্থকষ্ট ঘোচাতে সে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে নিজের খরচ জোগায়। তার ইচ্ছা ছিল, পড়াশোনা করে ছোট্ট একটা চাকরি করে হলেও অভাবের সংসারের হাল ধরবে, ভ্যানচালক বাবার দুঃখের দিন ফুরাবে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু কাওসার শামসুজ্জামান দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের সব এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ নুরুল আমীন নিয়েছেন। নিজেই কাগজপত্র বোর্ডে জমা দিয়েছেন। অফিসের কোনো খাতায় সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়নি। প্রবেশপত্রগুলোও তাঁর বাড়িতে ছিল। পরীক্ষার আগের দিন বুধবার সেগুলো প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেগুলো বিতরণের সময় জিনারুলের প্রবেশপত্র পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে গত ৩ জুলাই ওই অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে উপজেলা শিক্ষা বিভাগ। প্রবেশপত্র না থাকার বিষয়টি আগে জানলে জিনারুলের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত।

নুরুল আমীন বলেন, আমি বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে আর কলেজে যাইনি। আমার কাছে কারও প্রবেশপত্র ছিল না, এসব মিথ্যা কথা। জিনারুলকেও আমি প্রবেশপত্র দেব- এমন কথা কখনও বলিনি। তার ফরমও আমি পূরণ করিনি, তাকে ঠিকমতো চিনিও না। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নতুন অধ্যক্ষের, আমার নয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, পরীক্ষার দিন না জানিয়ে বিষয়টি আগে জানালে জিনারুলের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হতো। এখন আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেন তার প্রবেশপত্র দেওয়া হলো না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া ওই শিক্ষার্থী চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

আরও পড়ুন

×