দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত শাওন

শহিদুল ইসলাম শাওন
সমকাল প্রতিবেদক ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১০:৪৭ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১০:৪৭
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে নিহত শহিদুল ইসলাম শাওনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার জেলার মীরকাদিম পৌরসভার মুরমায় দাদার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও মুন্সীগঞ্জে মীরকাদিম এলাকায় শাওনের দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গত বুধবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন যুবদল কর্মী শাওন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তিনি মারা যান। শাওন হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার সারাদেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। মূলত, পুলিশের বিরুদ্ধেই এ মামলা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার বাদ মাগরিব নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে শাওনের কফিন নয়াপল্টনে নেওয়া হয়। দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলীয় পতাকা দিয়ে ঢাকা তাঁর কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের পতন ঘটিয়ে শাওন হত্যার জবাব দিতে হবে। শাওনের রক্ত তাঁদের নতুন করে শপথ নেওয়াচ্ছে যে, যে কোনো মূল্যে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য শাওন প্রাণ দিয়েছেন, তা আদায় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই শাওনের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদন হবে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, পুলিশের গুলিতে শাওন শহীদ হয়েছেন। তাঁর রক্তের কসম- এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে কেউ ঘরে ফিরব না।
জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আজিজুল বারী হেলাল, রফিকুল ইসলাম, মীর আলী নেওয়াজ, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, কামরুজ্জামান দুলাল, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহীন, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
এর আগে দিনভর মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। শুরুতে বলা হয় বাদজুমা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মরদেহ হস্তান্তর না করায় সময় ঘোষণা করা হয় বিকেল ৫টায়। এরপরও ঠিক সময়মতো মরদেহ দেয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শাওনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. জান্নাতুন নাঈম। সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করেন শাহবাগ থানার এসআই শহিদুল ইসলাম। তিনি সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেন, শাওনের কপালের ডান পাশে গভীর ক্ষতচিহ্ন ও মাথার পেছনে ডান পাশে গভীর ক্ষত রয়েছে। সেখান দিয়ে মগজ বেরিয়ে গেছে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাওনের মরদেহ তাঁর বাবার কাছে হস্তান্তর করে। এরপর শাওনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে। নয়াপল্টনে জানাজা শেষে শাওনের মরদেহ নিয়ে মুন্সীগঞ্জে নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন নেতাকর্মীরা।