বিশ্ব নদী দিবস
নদীগুলো ভালো নেই

দূষণে বিপন্ন সিলেটের সুরমা নদী। ছবিটি নগরীর দক্ষিণ সুরমার চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে তোলা -সমকাল
ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:৪৯
সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা, হবিগঞ্জের খোয়াই, সুনামগঞ্জের কালনী, মৌলভীবাজারের মনুসহ সিলেট বিভাগে শতাধিক ছোট-বড় নদনদী রয়েছে। মানুষের অসচেতনতা ও দখল-দূষণের কারণে ভালো নেই সিলেটের নদনদী। দখল, দূষণ ও পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পলি মাটিতে নদীর উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। এতে ভাটির জনপদে নৌপথ বন্ধ, চাষাবাদে সংকট ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এ বছর তিন দফা বন্যায় মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সিলেটবাসীকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকায় প্রায় অর্ধকোটি মানুষ চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। এ অবস্থায় নদী রক্ষায় সমন্ব্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশবিদরা সুরমার নাব্য সংকটের জন্য অমলশীদে জেগে ওঠা বিশাল চরকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেন, এ সংকট নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।
পাউবো সূত্র জানায়, একসময় বরাক হয়ে আসা পানির ৬০ শতাংশ কুশিয়ারা এবং বাকি ৪০ শতাংশ সুরমা নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। কিন্তু উৎসস্থল অমলশীদ থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পর্যন্ত সুরমার যাত্রাপথে স্থানে স্থানে চর জেগে ওঠায় এখন ৮০ শতাংশ পানিই যাচ্ছে কুশিয়ারায়। অন্যদিকে ২০ শতাংশ পানি নিয়ে সুরমা ক্রমেই রূপ নিচ্ছে মরা নদীতে। ওই সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুমে সুরমা নদীর পানির স্তর থাকে ১১-১২ মিটার। শুস্ক মৌসুমে এই স্তর ১ মিটারের নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালে শাবির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম সুরমা নদীর ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ভরাট সুরমাকে বাঁচাতে হলে বর্জ্য শোধনাগার করতে হবে। নদীর দু'পাশের বৃক্ষায়ন ও নদী ড্রেজিং জরুরি। কুশিয়ারার জন্য একই উদ্যোগ নিতে হবে।
চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) 'দ্য প্লাস্টিক ডেলিউজ : ইন দ্য সিলেট সিটি করপোরেশন এরিয়া, বাংলাদেশ' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুরমা বর্জ্যের ভাগাড়। ২০২১ সালে জমেছে ১৯ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী বলেন, অপরিকল্পিত নদীশাসন, পরিকল্পনাহীন সেতু নির্মাণ ও খননের উদ্যোগ না নেওয়ায় সুরমা নদীর প্রায় পুরোটাই ভরাট হয়ে পড়েছে। নাব্য কমায় প্রতি বছর বন্যা ও ভাঙনের শিকার হচ্ছেন লোকজন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। এবারের স্মরণকালের বন্যা এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
২০১৯ সালের ২৪ জুলাই নদনদী, খাল-বিল ও জলাশয়-জলাধারভিত্তিক অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রকাশ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে আছে দুই সহস্রাধিক নদী দখলদার। এই তালিকা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন ঘটা করে সুরমা নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও কিছুদিন পর তা মন্থর হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর সুরমার তীর, বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীর তীর, সদর উপজেলার চেঙ্গেরখাল তীর, সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর তীর দখলদাররা বহাল রয়েছে। বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীর তীর ঘেঁষে সহস্রাধিক দোকান রয়েছে। গোলাপগঞ্জের দেবরভাগা নদীর তীর প্রভাবশালীদের দখলে। কানাইঘাট পৌর শহরের পূর্ব থেকে দক্ষিণ বাজার পর্যন্ত নদীর তীর ও কূল দখল করে শতাধিক স্থাপনা রয়েছে। ছাতকে সুরমা নদীর তীরও দখলদারদের কবজায়।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান আলম বলেন, বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সবাই সচেতন না হলে এভাবেই নদীর ওপর নির্যাতন চলবে।
নগরীর জলাবদ্ধতার জন্য সুরমার নাব্য সংকটকে দায়ী করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় উপপ্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের সুরমা নদীর সদর অংশ ও বিশ্বনাথের বাসিয়া নদী খননে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। দখলদার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছয়বার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদে আগ্রহী ঠিকাদার না পাওয়ায় টাকা ফেরত গেছে।
- বিষয় :
- বিশ্ব নদী দিবস
- সুরমা নদী