ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন

১৪৫ জনের বক্তব্য শুনল তদন্ত কমিটি

১৪৫ জনের বক্তব্য শুনল তদন্ত কমিটি

গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ফাইল ছবি।

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২২ | ১০:৩৪ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ | ১০:৩৯

বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এ পর্যন্ত ৬৮৫ জনকে নোটিশ করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে ফুলছড়ির ১৪৫ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এ সময় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষের 'এক ডাকাত'কে শনাক্ত করা হলেও তিনি এক পর্যায়ে পালিয়ে গেছেন। এ অবস্থায় তদন্ত কমিটি আগামীকাল বুধবার সাঘাটায় যাওয়ার কথা জানিয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা ও ফুলছড়ি প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার ভোরে গাইবান্ধায় পৌঁছায় তদন্ত কমিটি। সার্কিট হাউস মিলনায়তনে নোটিশ পাওয়া ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা হাজির হলে সকাল ৯টায় তাঁদের বক্তব্য গ্রহণ শুরু হয়। ফুলছড়ির ১১টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ১৪৫ জনের বক্তব্য শোনে তদন্ত কমিটি।

এ সময় একাধিক প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে বহিরাগতদের প্রবেশের জন্য পুলিশকে দায়ী করে তদন্ত কমিটির সামনে বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার দাবি করেন। এ সময় তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখানো হয়।

ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজকে একটি ফুটেজ দেখিয়ে কঞ্চিপাড়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে পড়া একজন বহিরাগত ব্যক্তির পরিচয় জানতে চায় কমিটি। উপজেলা চেয়ারম্যান তার পরিচয় নিশ্চিত করলে কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তিকে হাজির করতে বলে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যান কমিটিকে জানান, তাকে নিয়ে আসার পথে পালিয়ে গেছে।

এদিকে ফুলছড়ির একজন প্রিসাইডিং অফিসার জানান, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রাখলে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যেত। এটি তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন। তাঁর মতে, কোন প্রতীকের প্রার্থী তা নির্ধারণ করা না গেলেও গোপন কক্ষে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

শুনানিতে অংশ নেওয়ার পর কঞ্চিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ফিরোজ কবির বলেন, তাঁর কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভোট গ্রহণ স্থগিতের নির্দেশ আসে। 

চন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম মোস্তফা বলেন, 'ভিডিও ফুটেজে তাঁর নিজের ছবি দেখিয়ে তদন্ত কমিটি বলেছে, এনাকে চেনেন? জবাবে আমি বললাম, জি এটা আমার ছবি। তাঁরা বললেন, কেন্দ্রে বহিরাগত লোক ঢুকেছে পুলিশকে বলেননি কেন? আমি বললাম, আমি তো দোতলায়। নিচে নেমে ওপরে উঠে দেখিনি।'

তদন্ত কমিটির সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সিসিটিভির ফুটেজ দেখিয়ে বলেন, পাঁচ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও অনেক কেন্দ্রে মাত্র একজন প্রার্থীর এজেন্ট দেখা গেছে। একজন এজেন্ট নির্বিঘ্নে ভোটারদের বারবার ভোটদানে সহযোগিতা করছিলেন। অনেক কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার তার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল।

এদিকে, তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, তাঁরা এ পর্যন্ত ৬৮৫ জনকে নোটিশ দিয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বুধবার সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে ৪০ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ পোলিং এজেন্ট, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৫২২ জনের শুনানি হবে। 

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দু'জন বিজিবি ও র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপিসহ ২৭ জনের বক্তব্য শোনা হবে।

সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা মিলে সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসন গঠিত। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে গত বুধবার সকাল ৮টায় উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন ভোট বর্জন করেন। এর পর রাজধানী থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় গোপন বুথে ঢুকে ভোট নেওয়াসহ নানা অনিয়ম দেখে ইসি প্রথমে ৫১টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে। বেলা ২টার দিকে পুরো নির্বাচনই বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনিয়ম তদন্তে গঠিত হয় তিন সদস্যের কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। সদস্য সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী ও সদস্য যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। 

আরও পড়ুন

×