টঙ্গীতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীরা

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২ | ০০:২৭
গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিনের মুক্তি চেয়ে মঙ্গলবার টঙ্গীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ককটেল বিস্টেম্ফারণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ এনে মামলা করা হয় দলটির ২০০ নেতাকর্মীর নামে। এতে ৩৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি ও বাকি ১৬১ জনকে করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি। অথচ বিএনপি নেতারা বলছেন, তাঁরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছিলেন। ককটেল বিস্ম্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে তাঁদের অনেককে এলাকা ছেড়ে দিতে হয়েছে।
জানা গেছে, ১০ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে গাজীপুর মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় হওয়া মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয় মহানগর বিএনপির বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিনকে। তিনি চিকিৎসার জন্য ৪ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ছিলেন। দেশে ফিরে সোমবার তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তাঁর করা জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বাটা গেট থেকে টঙ্গী বাজার পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কয়েক মিনিটের বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশও শেষ হয়।
মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুল আলম শুক্কুর বলেন, 'মিছিলটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল। যদি ককটেল বিস্টেম্ফারণ হতো, তাহলে আশপাশের বাজার ও দোকানের লোকজন তো শব্দ পেত। ককটেল বিস্টেম্ফারণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।'
বাটা গেটের কাছের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সেদিন মহাসড়কে মিছিল করেছিলেন। অল্প সময়ের মিছিল থেকে স্লোগান ছাড়া কোনো শব্দ পাননি।
বুধবার টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে হাতবোমা বিস্টেম্ফারণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেলে আনারকলি রোডের মাথায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২০০ থেকে ২৫০ জনের হট্টগোলের সংবাদ পায় পুলিশ। এসআই সাব্বির হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য টঙ্গী বাজারের মিতালী পেট্রোল পাম্পের সামনে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মিছিল থেকে শব্দ শোনা যায়।
এসআই সাব্বির হোসেন বলেন, মিছিল থেকে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে স্লোগান দিয়ে পথচারীদের লক্ষ্য করে পাঁচটি ককটেল ছোড়া হয়। এর মধ্যে বিকট শব্দে দুটি বিস্টেম্ফারিত হয় এবং তিনটি অবিস্টেম্ফারিত থাকে। পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
বিষয়টিকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেন মামলার ১৬ নম্বর আসামি নূর মোহাম্মদ ইউসুফ। তাঁর ভাষ্য, মিছিলের ভিডিও অনেকের কাছে আছে। এতে ককটেলের বিস্টেম্ফারণ দেখা যায়নি।
দলটির স্থানীয় এক নেতা গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িতে থাকতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, মামলার পর তাঁর মতো অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। অনেকে মিছিলে ছিলেন না, অথচ তাঁদের নামেও মামলা দিয়েছে।
ওই মামলায় ১৩ নম্বর আসামি গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ হাওলাদার বলেন, 'আমি তো মিছিলেই ছিলাম না। হয়রানির জন্য মামলায় জড়িয়েছে।'
মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার মনে করেন, শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমকে নাশকতার মামলা হিসেবে সাজিয়েছে পুলিশ।
এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তো এসব বলবেই। ঘটনার সত্যতা আছে বলেই মামলা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলায় দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
- বিষয় :
- টঙ্গী
- বিএনপি
- গ্রেপ্তার আতঙ্ক