ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

'বেলা'র সেমিনারে তথ্য

রাজশাহী নগরীতে ৬ বছরে ভরাট ৮০০ পুকুর

রাজশাহী নগরীতে ৬ বছরে ভরাট ৮০০ পুকুর

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল - সমকাল

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২ | ০৮:১৬ | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ | ০৮:২২

রাজশাহী নগরীতে ২০১৪ সালে প্রায় এক হাজার পুকুর ছিল। এর মধ্যে গত ৬ বছরে ৮০০ পুকুরই ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ২০০ পুকুর। এগুলোও ভরাটের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

বুধবার দুপুরে নগরীর সাহেব বাজারের হোটেল ওয়ারিসানে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে 'অস্তিত্ব সংকটে রাজশাহী নগরীর পুকুর-জলাশয়: পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে করণীয়' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাজশাহী জেলার সভাপতি ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সচিব মো. মশিউর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন প্রমুখ।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা'র রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল। এতে বলা হয়, রাজশাহী প্রাচীন এবং দেশের উল্লেখযোগ্য একটি বিভাগীয় শহর। রাজশাহী রেশম, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নগরী হিসাবেও পরিচিত। একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসাবে রাজশাহী দেশে-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে। পুকুরের নগরী হিসাবেও একসময় পরিচিতি ছিল রাজশাহী। এক সময় পুকুরের পানি প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার করতেন নগরবাসী। এমনকি রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত 'সোনাদীঘি'র পুকুরের পানি নগরবাসীরা পান করতেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এই নগরীতে কয়েক হাজার পুকুর ছিল।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৪ সালে বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের এক তথ্যে দেখা যায়, নগরীতে প্রায় এক হাজারের মতো পুকুর অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা ২০০ এর নিচে নেমে এসেছে। গত কয়েক দশকে বিশেষ করে গত ১৫ বছরে নগরীর অধিকাংশ পুকুরই ভরাট করা হয়েছে। কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো রাতের অন্ধকারে। পুকুর ভরাট করে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন, অট্টালিকা বানানো হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত আছে।

এতে বলা হয়, পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বিগত কয়েক দশকে রাজশাহী নগরীর প্রায় ৯৭ ভাগ পুকুর-জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষায় পুকুর-জলাশয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

বক্তারা বলেন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) প্রণীত 'রাজশাহী মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (২০০৪-২০২৪)'-এ নগরীর উল্লেখযোগ্য পুকুরকে সংরক্ষণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হলেও পুকুর ভরাট রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে কোনো ধরনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে কতিপয় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান পুকুরগুলো একের পর এক ভরাট করে চলেছে। এমনকি নগরীর কোথাও বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা নির্বাপণের জন্য জলাশয় খুঁজে পাওয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে- তা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে। উন্নয়নের সময় পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করে তা প্রশমণের চিন্তাও করতে হবে, তাছাড়া উন্নয়ন টেকসই হবে না। আর এ লক্ষ্যে নগরীর পুকুর ভরাট রোধে কাজ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×