ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জীবিকার জন্য ঋণ, পরিশোধে কষ্ট

জীবিকার জন্য ঋণ, পরিশোধে কষ্ট

এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ | ০১:৪৫

গৃহবধূ জীবন আরা বেগম একটি নৌকা তৈরি করতে গত বছর ব্র্যাক থেকে ঋণ নেন ৫০ হাজার টাকা। কিস্তিও ঠিকমতো দিচ্ছিলেন। তবে এ বছর নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলা তাঁর পরিবারে ছন্দপতন ঘটে। সংসারের ব্যয় মেটাতে ব্র্যাকের ঋণ পরিশোধের আগেই আরেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের বাসিন্দা জীবন আরা বেগম। পরিবারে সদস্য সংখ্যা তিনজন। ভূমিহীন হলেও তাঁর স্বামী তফিজুল হক মুদি দোকান ও বর্ষায় নৌকা চালিয়ে যে ভাড়া পান, তা দিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। ছেলে কলেজে পড়ছে। তবে এখন সংসারের ব্যয় আর কিস্তির চাপে ভীষণ কষ্টে আছে জীবন আরা-তফিজুল হক দম্পতি।

একই পরিস্থিতি একই গ্রামের আবদুল বারিক মিয়া, ফুয়াদ হোসেন, জুয়েল রানা, শহিদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, ইনসাফ আলীসহ আরও অনেকের। তাঁরা সবাই ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগের বছরের তুলনায় ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে। কিস্তি দিতে না পারায় বেড়েছে খেলাপিও।

তাড়াশ সদরসহ প্রত্যন্ত ইউনিয়নে ক্ষুদ্রঋণ দেয় ১২ থেকে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আশা, গ্রামীণ ব্যাংক ও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)। এই তিন প্রতিষ্ঠানের তিনটি শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৭ হাজার ১০৮ সদস্য ঋণ নেন ১৮ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। খেলাপি ছিলেন ১ হাজার ৫৯৪ জন। চলতি বছরের ৯ মাসেই ৭ হাজার ৯৮৪ জন ২৫ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। খেলাপি ১ হাজার ৫১ জন। ৯ মাসে ৮৭৬ সদস্য ও ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণ বেড়েছে।

আশার সদর উপজেলা শাখা ২৯টি গ্রামে ২০২১ সালে ১ হাজার ৯৭১ সদস্যের মধ্যে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করে। পুরো বছরে ঋণখেলাপি ছিলেন ৬৩০ জন। ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে একই এলাকায় ২ হাজার ৩৫৩ সদস্যের মধ্যে ১২ কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার টাকা বিতরণ হয়েছে। এ পর্যন্ত ঋণখেলাপি ৬৪ জন। এর মধ্যে ৩৯ জন কাজের সন্ধানে অন্য জায়গায় চলে গেছেন।

আশায় ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৩৮২ জন। ঋণ বেড়েছে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা। সদর শাখার ব্যবস্থাপক মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, উপজেলায় আরও তিনটি শাখাতেও ঋণের চাহিদা বেড়েছে।

২০২১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সদর শাখা ৪৩টি গ্রামে ৩ হাজার ৮৬২ জনের মধ্যে জানুয়ারি-ডিসেম্বর মেয়াদে ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এ সময়ে খেলাপি ছিলেন ৭০৪ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৪ হাজার ৩২৫ জনের মধ্যে ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হয়েছেন ৬৮০ জন। গত বছরের তুলনায় ৯ মাসে ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৪৬৩ জন। আর ঋণ বেড়েছে ৫৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

গ্রামীণ ব্যাংকের সদর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল কুদ্দুস বলেন, কিস্তি তুলতে গেলে অনেক সদস্য সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির টাকার পরিমাণ কমানোর আবেদন করছেন। গত বছর এমন ছিল না।

টিএমএসএসের তাড়াশ শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে উপজেলার ৩৩ গ্রামে ১ হাজার ২৭৫ সদস্যের মধ্যে ৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।

ঋণখেলাপি ছিলেন ২৬০ জন। চলতি বছরের ৯ মাসে ১ হাজার ৩০৬ সদস্যের মধ্যে ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ সময়ে ঋণখেলাপি হয়েছেন ৩০৭ জন। ৯ মাসে ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৩১ জন। ঋণ বেড়েছে ৯০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। খেলাপি সদস্যও ৪৭ জন বেড়েছে।

ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, নানা কারণে গ্রামের অনেকেই ক্ষুদ্রঋণ নেন। কিস্তির টাকা দিতে কষ্টও পান। তাঁরা সহজ শর্তে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিআরডিবি, সরকারি তপশিলি ব্যাংক কম সুদে ঋণ দেয়।

তাড়াশ থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক, এনজিও ও সুদের কারবারিদের কাছে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও চেক বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন অনেকে। পরিশোধ করতে না পারায় ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন। তাড়াশে এমন ৫৩ জনের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যান (চেক ডিজঅনার) হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

আরও পড়ুন

×