ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বগুড়ায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কলেজ কর্মচারীদের বিক্ষোভ

বগুড়ায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কলেজ কর্মচারীদের বিক্ষোভ

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকরা। ছবি-সমকাল

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২২ | ০৩:২১ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ | ০৩:২১

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের মাস্টার রোলের কর্মচারীরা। 

সোমবার কলেজের অধ্যক্ষর কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১টার দিকে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী কর্মচারীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।

জানা যায়, আজিজুল হক কলেজে ১৭৫ জন কর্মচারী মাস্টার রোলে কাজ করেন। এদের মধ্যে অফিস সহায়ক, গার্ড, ঝাড়ুদার ও সুইপার রয়েছেন। এসব কর্মচারীদের বেশিরভাগই এই কলেজে দীর্ঘ ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে কাজ করে আসছেন। কলেজ প্রশাসনই তাদের বিভিন্ন সময় মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়েছেন।

কর্মচারীদের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করলেও তাদের বেতন বেড়েছে নাম মাত্র। একজন ঝাড়ুদার এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে মাত্র ২ হাজার ২৫০ টাকার বেতন পান। এছাড়াও অফিস সহায়ক পদে কর্মরত একজন কর্মচারী সর্বোচ্চ ৯ হাজার ২০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। এ বছরের শুরু থেকেই কলেজের কর্মচারীরা অধ্যক্ষর কাছে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলীসহ কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মাহাতাব হোসেনকে নিয়ে বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে ১৪ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বেতন বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দিয়ে প্রত্যেক কর্মচারীর ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করে। সেই প্রতিবেদন এই মাসের ১ নভেম্বর অধ্যক্ষর কাছে জমা দেওয়া হয়।

কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতিবেদনে বেতন বৃদ্ধির সুপারিশের পরেও এই মাসের বেতন আগের হিসেবেই দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কবে নাগাদ এই বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ কার্যকর করা হবে সেই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনাও জানায়নি।

তাদের আরোও অভিযোগ, কলেজে শিক্ষার্থীদের থেকে কর্মচারী কল্যাণ ফান্ড বাবদ টাকা আদায় করা হয়। ভর্তি ও  প্রতি বর্ষে ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের থেকে ৪৫০ টাকা করে আদায় করা হতো। কয়েকমাস আগে থেকেই কর্মচারী কল্যাণ তহবিলে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা ফি আদায় করা হচ্ছে। এরপরও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এছাড়াও কলেজে মাস্টার রোলে চাকরি করা প্রায় ৪০ জন কর্মচারীকে অধ্যক্ষ বিভিন্ন সময় মৌখিক ভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। এরপর থেকে তাদের বেতন ভাতাও বন্ধ আছে। শুধুমাত্র মৌখিক অব্যাহতি পেয়ে এই মানুষগুলো কাজ ছাড়া মানবেতর জীবন যাপন করছে।  এই ৪০ জন কর্মচারী মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছর পুরাতন কর্মচারীও আছেন।

এমনই একজন কর্মচারী আলাল হোসেন। তিনি প্রায় ২৭ বছর আগে মাস্টার রোলে সরকারি আজিজুল হক কলেজে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি বেতন পেতেন মাত্র ৭ হাজার ২০০ টাকা। এই বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতে কলেজের অধ্যক্ষ তাকে চাকরি থেকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেন। তার বিরুদ্ধে কলেজের এক শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়। এরপর থেকে তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

আলাল হোসেন জানান, এই বুড়ো বয়সে আমি কি করে খাব। স্ত্রী,সন্তানদের নিয়ে আমি মানবেতর জীবন যাবন করছি। আমার ভুল হয়ে থাকলে আমি স্যারদের পা ধরে মাপ চেয়েছি। আমাকে চাকরি থেকে লিখিত ভাবে অব্যাহতিও দেওয়া হয়নি। এরপরও আমার বেতন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

সরকারি আজিজুল হক কলেজের কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল আলম লিটন জানান, আমাদের বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা শিক্ষকরা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। তারপরও আমাদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। আমাদের পরিবার নিয়ে আমরা কষ্টে আছি। 

কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জানান, অধ্যক্ষ স্যার আমাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এজন্য আমরা বিক্ষোভ স্থগিত করেছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে। 

সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী জানান, কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক। এজন্য আমরা কমিটির মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তও নিয়েছি। সেই বিষয়ে তারা একমতও হয়েছে। তবে সব কিছুর আনুষ্ঠানিক কিছু নিয়ম আছে। অতি দ্রুত তাদের বেতন বৃদ্ধি কার্যকর করা হবে।

আরও পড়ুন

×