সিটি নির্বাচনের ফল নিয়ে নাটকীয়তা

চলতি বছরের ১৫ জুন রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা - ফাইল ফটো
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ০০:৩৯
বিদায়ী ২০২২ সালজুড়ে নানা ঘটনায় আলোচিত হয় কুমিল্লা। তবে সব ঘটনা ছাপিয়ে ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ফলাফল ঘোষণা। গত ১৫ জুন অনেকটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও ফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে বেশ উত্তাপ ছড়ায়। কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার চলাকালে হঠাৎ অদৃশ্য কারণে ফল ঘোষণা বন্ধ করে বিতর্কের জন্ম দেন রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে মেয়র হিসেবে নৌকার প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে- 'হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় এবং বেধে যায় হট্টগোল, পরে ঘোষণা করা হয় ফলাফল।' গত ২২ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (জনসংযোগ) ও যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত দুই পাতার প্রতিবেদনটি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা।
ফল ঘোষণা যে কারণে প্রশ্নবিদ্ধ : নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১০৫ কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টির ফল ঘোষণার পর সুশৃঙ্খল চিত্র পাল্টে যায়। চলে যায় বিদ্যুৎ, বেধে যায় হট্টগোল। কিছুক্ষণ পর ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণা করা হচ্ছিল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে, ফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘোষণা বন্ধ করে মোবাইল ফোনে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী। ঘোষণা মঞ্চে তাঁকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এ সময় নৌকার সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েন কুমিল্লা সিটির দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও তাঁর সমর্থকরা। চূড়ান্ত ফলাফলে নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পান ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। পরে লড়াইয়ের ব্যবধানটা হয় মাত্র ৩৪৩ ভোট। 'কারচুপির' অভিযোগ তোলেন সাক্কু। তবে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করেন রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
সাক্কু যে কারণে আইনি পদক্ষেপ নেননি : ফল ঘোষণার পর বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমকে সাক্কু বলেন, তিনি 'কারচুপি'র বিরুদ্ধে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল কিংবা উচ্চ আদালতে যাবেন। তবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার ঘোষণা দেন নৌকার প্রার্থী রিফাত। তিনি অস্বীকার করেন সাক্কুর অভিযোগ। কিন্তু সাক্কু কেন ফল চ্যালেঞ্জ করে আইনগত পদক্ষেপ থেকে পিছু হটলেন? এ বিষয়ে গত ২৭ নভেম্বর সাক্কু তাঁর বাসভবনে সমকালকে জানান, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কয়েকজন কমিশনার নানা বিতর্কের জন্ম দেন। বিধি অনুসারে 'স্থানীয় এমপির কী করা উচিত আর কী করা উচিত না' এ বিষয়ের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফেলেন।
তাঁরা কখনও বলেন, এমপির এলাকা ছাড়তে হবে, পরে আবার বলেন, না ছাড়লে কমিশনের কিছু করার নেই। ফল ঘোষণার পর ঢাকায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে করে নির্বাচন কমিশনের তরফে আবার বলা হয়, 'এমপিকে এলাকা ছাড়ার কথা বলেননি।' সাক্কু আরও বলেন, 'নতুন ওই কমিশনার আসলে নির্বাচন বিধিই জানতেন না। আমি বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, 'আইনে কমিশনের স্পষ্ট ক্ষমতার কথা বলা আছে, তাঁরা ইচ্ছা করলে নির্বাচন বন্ধ করতেও পারতেন। তা না করে সাধারণ জনগণের মতো কথা বলে সবকিছুতে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।' সাক্কুর ভাষ্য, নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল কিংবা উচ্চ আদালতে গিয়ে অনেকেরই জুতা ক্ষয় হয়ে যায়, বাদী মরে যায়, মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু রায় ঘোষণা হয় না। এসব কথা ভেবে ইচ্ছা করেই আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরফানুল হক রিফাত জানান, ফলাফল নিয়ে পরাজিত মেয়র প্রার্থী সাক্কুর সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে প্রমাণ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতেন। তা যেহেতু নেননি, এখন আর এসব কথা বলে লাভ কী?