কষ্টের নাম নেতাই নদী

ধোবাউড়া উপজেলার মন্দিরকোনা এলাকায় নদী পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী - সমকাল
মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৫:০০
গারো পাহাড়ের পাদদেশের গ্রাম কলসিন্দুরকে নারী ফুটবলের আতুরঘর বলা হয়। ভারত থেকে নেমে আসা নেতাই নদীর কোল ঘেঁষা গ্রাম কলসিন্দুর দেশজুড়ে আলোচিত। বর্ষায় নেতাই নদী প্রবল স্রোতে জেগে ওঠে। আর শুস্ক মৌসুমে যেন বিরানভূমি। কোথাও হাঁটু আবার কোথাও ঊরু পানি থাকে। নেতাই নদীর দুটি স্থানে সেতুর অভাবে অন্তত ষাট গ্রামের মানুষের সীমাহীন কষ্ট। এখনকার মানুষের এক কষ্টের নাম নেতাই নদী।
কলসিন্দুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনের ৫০০ গজের মধ্যেই নেতাই নদী। সেখানে মন্দিরকোনা এলাকায় খেয়াঘাট। এ গ্রামের নারী ফুটবলের আলোচিত সদস্য মারিয়া মান্দার বাড়ি। এ ঘাটে বর্ষা মৌসুমে নৌকা থাকে। নদীর এপার-ওপার রশির সঙ্গে আটকানো নৌকা টেনে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত। তবে ভরা বর্ষায় প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা দিয়ে পারাপারও কষ্টকর। আর শুস্ক মৌসুমে থাকে ঊরু সমান পানি। এই পানি ভেঙে নদী পার হয়ে কলসিন্দুর হাটে যান বাসিন্দারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় শিক্ষার্থীরা। খেয়াঘাট এলাকা দিয়ে চলাচল করে ভল্লবপুর, পঞ্চনন্দপুর, কাশিপুর, শানখলা, রানীপুর, উত্তর রানীপুর, মুন্সিপাড়া, বাকপাড়া, কমলপুর, কড়ইগড়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
সম্প্রতি নেতাই নদীর পাড়ে গিয়ে মানুষের সীমাহীন কষ্টের চিত্র চোখে পড়ে। কাঁধে সাইকেল নিয়ে, শিশুসন্তানকে কাঁধে দিয়ে, হাট থেকে কেনা নানা জিনিস নিয়ে, গবাদি পশু নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে মানুষ। নদীপাড়ে এসে সবাই পরনের লুঙ্গি ঊরু পর্যন্ত তুলে পারাপার হন।
মন্দিরকোনা গ্রামের আবদুর রশিদের একটি পা নেই। ক্রাচে ভর করে চলাচল করেন তিনি। কলসিন্দুর হাটে গিয়েছিলেন সংসারের জিনিসপত্র কিনতে। তা নিয়ে ক্রাচে ভর করেই নদী পারাপার হচ্ছিলেন রশিদ। তিনি বলেন, 'বর্ষায় নৌকা রশি টেনে চলাচল করে। এখন হেঁটে নদী পার হচ্ছি।'
ঘটনাস্থলে কথা হয় পঞ্চনন্দপুর গ্রামের রঞ্জু মিয়া ও রিপন মিয়ার সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য, তাঁদের অনেক দাবি, কিন্তু বলার মতো জায়গা ও উপায় নেই। গ্রামের গর্ব সাফজয়ী নারী ফুটবলার মারিয়ার কাছে সবাই সেতুর আবদার করেছেন। মারিয়াদের অবদানে হলেও সেতু চান তাঁরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, নদী দিয়ে যুগের পর যুগ কষ্ট করে চলাচল করলেও তাঁদের ভাগ্যের উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসছে না। জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার গিয়ে কেবল আশ্বাস পেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।
শুধু মন্দিরকোনা নয়, কালিকাবাড়ি এলাকায়ও নেতাই নদীর ওপর একটি সেতু দরকার। একটি সেতু নির্মাণ করলে অন্তত ৫০ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির নিরসন হবে। কালিকাবাড়ি এলাকায় নদী পারাপারের জন্য বর্ষায় একটি নৌকা থাকে। বাঁশের সাঁকো পানির তোড়ে ভেঙে গেলে নৌকায় চলাচল করে মানুষ। তবে শুস্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই ভরসা। গত ২৬ নভেম্বর কালিকাবাড়ি এলাকায় কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একটি নতুন বাঁশের সাঁকো করে দিয়েছেন। কিন্তু স্থায়ী সেতু চান নেতাই পাড়ের মানুষ।
আওয়ামী লীগ নেতা প্রিয়তোষ বিশ্বাস বাবুল বলেন, বর্ষাকালে বৈরী রূপ নেয় এ নদী। যেদিকে যায়, সেদিকে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। তাঁদের একমাত্র দাবি, নেতাই নদীতে টেকসই বেড়িবাঁধ। সেতু হলে দুই পাড়ের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
তবে কালিকাবাড়ি এলাকায় প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪০ মিটার সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকের।
উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম জানান, এ নদী দিয়ে বড় জলযান চলাচল করে। এ কারণে সেতুর উচ্চতা যেন যান চলাচলের উপযোগী হয়- এমন হলে সেতুর উচ্চতা অনেক হয়ে যায়। এত উঁচু সেতু এলজিইডি করতে পারবে কিনা এই আশঙ্কা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
- বিষয় :
- নেতাই নদী
- গারো পাহাড়
- নদী পারাপার