আচার বিক্রি করে সংসারের হাল ধরা সেই মাসুমা পেলেন জয়ীতা পুরস্কার

জয়ীতা পুরস্কার পাওয়া মাসুমা ইসলাম- সমকাল
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৮:২৫ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৮:২৫
মহামারি করোনাকালে মাসুমা ইসলামের স্বামী রাজিবুল ইসলামকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়। ২০২০ সালে লকডাউনের কারণে বগুড়া শহরের ছিলিমপুর এলাকায় হোটেল নাজ গার্টেন বন্ধ হলে চাকরি হারান রাজিবুল। বেকার হয়ে পড়েন তিনি। রোজগার বন্ধ। ঘরে মা, ভাই, স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। মাসুমা তখন সংসারের হাল ধরতে রাজিবুলের পাশে দাঁড়ান। শুরু করেন আচারের ব্যবসা। আচারেই সাফল্যের দেখা মেলে। সেই মাসুমা পেলেন এবার জেলায় সেরা জয়ীতা পুরস্কার। শুক্রবার বেগম রোকেয়া দিবসে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
বগুড়া শহরের সিও অফিস কইগাড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুমা। শাশুড়ির কাছ থেকে গল্প শুনে মাসুমা মনস্থির করেন মাংসের আচার বানাবেন। কিন্তু পুঁজি নেই। ছোট বোনের কাছ থেকে তের হাজার টাকা ধার নেন মাসুমা। আর বাড়িতে নানা রকম আচার বানানো শুরু করেন তিনি। বিক্রির জন্য দোকান লাগবে। এই আচার তিনি কোথায় বিক্রি করবেন? চিন্তায় পড়েন মাসুমা। মাসুমাকে তার দেবর সজীব ফেসবুক পেইজ খুলে দেন। তার ফেসবুকে আচারের ছবি দিয়ে বিক্রয় করতে শুরু করেন। অল্প দিনেই সাড়া পান মাসুমা। অর্ডার বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে কাজ। স্বামী রাজিবুলও এসে পাশে দাঁড়ান। বাড়িতে ছোট পরিসরে গড়ে তুলেছেন আচারের কারখানা। নানা পদের আচার তৈরি করা হয় ছোট কারখানায়। তবে মাসুমার আচার ব্যবসায় ঝড় তোলে গরুর মাংসের আচার। মাসে এখন প্রায় ১০০ কেজি গরুর মাংসের আচার বিক্রি করেন তিনি। নানা রকম আচারের পাশাপাশি অনলাইনে ঘি, দই, লাচ্ছা সেমাই বিক্রি করেন তিনি।
মাসুমা বলেন, বাবার বাড়ি, শশুর বাড়ি কোথাও রান্না করতে হয়নি আমায়, আমার শাশুড়ি বলেন- তুমি বাচ্চা দেখাশুনা করো, রান্না করতে হবে না। শাশুড়ি পারুল বেগম প্রায় গল্প করেন আগে ফ্রিজ ছিলো না, আগেকার মানুষ মাংসের আচার বানিয়ে ছয়-সাত মাস ঘরে রাখতেন। শাশুড়ির কাছ থেকে শোনা গল্পেই তিনি মাংসের আচার তৈরি করেন। ব্যপক সাড়া পান। শাশুড়ির কাছ থেকে শিখেছেন অনেক ধরনের আচার তৈরি করা।
তিনি বলেন, গরুর মাংসের এই আচার খুব মজার ও লোভনীয়। খিচুড়ি, পোলাও, সাদা ভাতের সঙ্গে খাওয়া যায়। সরিষার তেলে মাংস ডুবে থাকে বলে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
মাসুমা জানান, সারা দেশেই তার আচারের বাজার রয়েছে। তবে বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, গাজীপুর থেকে বেশি অর্ডার আসে এই আচারের। দেশের বাইরে আমেরিকা, লন্ডন, দুবাই, মালয়েশিয়া, চীন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরেও এই আচার পাঠিয়েছেন তিনি। উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপে সবচেয়ে বেশি আচার বিক্রি হয়। উই ছাড়া ঢাকা বিজনেস গ্রুপ, খুলনা বিজনেস সোসাইটি, বগুড়া বিজনেস কেয়ার, বগুড়া বিজনেস গ্রুপ, ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স ফোরাম, নানা গ্রুপে মাসুমা তার পণ্য বিক্রি করেন। তার স্বামী রাজিবুল ইসলাম কাঁচামাল কেনা, কুরিয়ারে পণ্য বুকিং দেওয়ার মতো কাজে তাকে সহযোগিতা করেন।
মাসুমা নিজের ব্র্যান্ডের নাম দিয়েছেন আরএস ফুড কর্নার। গরুর মাংসের আচার ১২০০, রসুনের আচার ৬০০ এবং আমসহ অন্যান্য আচার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। সারা দেশ থেকে অর্ডার আসছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি মাসে গড়ে লাখ টাকার শুধু আচার বিক্রি হচ্ছে। আচার ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি থেকে মাসে আয় গড়ে ৫০ হাজার টাকা। এ থেকেই তাদের সংসার চলছে ভালোভাবে। মাসুমার এই সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে কৃষি ব্যাংক তাকে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ঋণও দেয়।
এবার মাসুমা ‘অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার পান বলে জানান জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম। শুক্রবার বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
- বিষয় :
- বগুড়া
- মাসুমা
- নারী উদ্যোক্তা
- আচার
- আচার তৈরি
- জয়ীতা পুরস্কার