ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

পরিবেশের ক্ষতি ঠেকাবে ৩ ধরনের ৬ লাখ চারা

পরিবেশের ক্ষতি ঠেকাবে ৩ ধরনের ৬ লাখ চারা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন তৈরির পর দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা রোপণ করছে রেলওয়ে সমকাল

মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, চকরিয়া (কক্সবাজার)

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ০২:৫৮

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করতে গিয়ে কাটা পড়েছে সংরক্ষিত বনের কয়েক লাখ গাছ। যে কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রেলরুটের দুই পাশে রোপণ করা হচ্ছে ৬ লাখ বনজ, ফলদ, ঔষধি গাছ।

রেললাইনে বনায়নের দায়িত্বে রয়েছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে। তাঁর তত্ত্বাবধানে চলছে বৃক্ষচারা লাগানোর কাজ।

রেলওয়ের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মুফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, নতুন রেল সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে সংরক্ষিত বনের কয়েক লাখ ছোট-বড় গাছ কর্তন করা হয়েছে। যে কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন বিভাগের সুপারিশ অনুযায়ী রেলওয়ে বনের এমন ক্ষতি পুষিয়ে দিতে রেললাইনের দুই পাশে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রেলওয়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পন্ন হলে বনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। ট্রেনযাত্রীরাও সবুজ ভরা মনোরম পরিবেশ দেখে দেখে ভ্রমণ করতে পারবেন।'

তবে সংশ্নিষ্টদের মতে, রেললাইনের দুই পাশে শুধু গাছ লাগালেই হবে না, তা রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। না হয় এসব চারা টিকিয়ে রাখা যাবে না। বৃক্ষ চারা রোপণের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোতে ঘেরা-বেড়া দিতে হবে। একই সঙ্গে পানি দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।

২০১০ সালে রেলওয়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ও রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণে প্রকল্পটি গ্রহণ করে, যা অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৬ সালে। এডিবির অর্থায়নে ১২৮ কিলোমিটার রেল সড়ক নির্মাণে কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ইতোমধ্যে রেললাইন নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে।

জানা যায়, রেললাইনের পাশে লাগানো বনজ গাছের মধ্যে রয়েছে গর্জন, শাল, শিলকড়ই, আকাশমণি, কাঠবাদাম, মেহগনি। ফলদ বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে জলপাই, আম, লিচু, জামরুল, ব্ল্যাকবেরি, গাব, ডালিম, শরিফা, সফেদা। এসব বৃক্ষের সঙ্গে সড়কের শোভাবর্ধনের জন্য ফুলগাছও রোপণ করা হচ্ছে। ফুলগাছগুলো হচ্ছে রাঁধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, কদম ও রেইনট্রি। ঔষধি প্রজাতির গাছের মধ্যে রয়েছে আমলকী, হরীতকী, বহরা ও অর্জুন। তবে নেই শুধু খেজুর ও তালগাছ। চকরিয়া কলেজের অধ্যাপক এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, 'রেললাইন করতে গিয়ে অনেক গাছ কাটা পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে রেললাইনের দুই পাশে বৃক্ষরোপণ জরুরি ছিল, যেটা এখন রেলওয়ে করছে। এটা খুবই ইতিবাচক। তবে এসব বৃক্ষ চারা বাঁচিয়ে রাখতে হলে রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই জরুরি।'
একই কথা বলেছেন পেকুয়া বিএমআই কলেজের অধ্যাপক ইব্র্রাহীম মুহাম্মদ। তিনি সমকালকে বলেন, 'রেল কর্তৃপক্ষ যেভাবে বৃক্ষরোপণ করছে, তাতে

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাই হবে না, রেললাইনের সৌন্দর্যও বাড়বে। তবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে রেললাইনের দুই পাশে তাল ও খেজুর গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। এতে পরিবেশের যেমন উপকার হবে, তেমনি মানুষের কল্যাণ হবে।'

রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এক লাখ চারা বড় হয়ে উঠছে। আগামী মৌসুমে অবশিষ্ট চারা রোপণ করা হবে। এসব চারা রোপণ সম্পন্ন হওয়ার পর রেল কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করবে।

মূলত সেসব স্থানে রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হচ্ছে, সেসব স্থানে গাছের চারা লাগানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার ও চকরিয়ায় বিপুল সংখ্যক গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করেছে রেলওয়ে।

আরও পড়ুন

×