চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে ৬ মাসে ৩০ জনের মৃত্যু
সড়ক প্রশস্ত হলেও থামছে না প্রাণহানি

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি এভাবে প্রশস্ত করার পরও থামছে না দুর্ঘটনা সমকাল
ইকবাল হোসেন মনজু, ফটিকছড়ি
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:৩৪
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি ছিল একেবারে সরু। ফলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হতো। সেই সরু সড়ক প্রশস্ত হয়েছে। তাতে সহজ হয়েছে যানবাহন চলাচল। কিন্তু চালকদের বেপরোয়া গতির নেশা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের প্রাণ। সড়কের ফটিকছড়ি অংশই সবচেয়ে বেশি 'মরণফাঁদে' পরিণত হয়েছে। গেল ছয় মাসে এই সড়কে শতাধিক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ গেছে ৩০ জনের। পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এই আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্ততা ১৮ ফুট থেকে ৩৬ ফুট করার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সড়ক প্রশস্ত করার পর দুর্ঘটনা কমে আসার কথা থাকলেও উল্টো বেড়ে গেছে। মূলত অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সড়কের পাশে ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের এলোমেলোভাবে দাঁড় করিয়ে রাখার কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। এ ছাড়া সড়কের ওপর থাকা হাটবাজারগুলো দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
ফটিকছড়ি পৌর মেয়র মো. ইসমাইল হোসেন সমকালকে বলেন, 'চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কটি প্রশস্ত হওয়ার পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়েছে, এটা ঠিক। সড়কের ওপর বাজার, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গতি নিয়ন্ত্রক ও সড়ক ডিভাইডার না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি।' তিনি আরও বলেন, 'জেলা ও উপজেলার সমন্বয় সভায় আমি সড়কটিতে ডিভাইডার নির্মাণের দাবি জানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগেও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গতি নিয়ন্ত্রক করে দেওয়ার দেওয়ার আবেদন করেছি। কিন্তু তা করা হচ্ছে না।'
জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইমাম হোসেন নামে এক শিশু কাজিরহাট বাজারে গাড়িচাপায় মারা যায়। একই দিন বিবিরহাট আন্ডা মার্কেট এলাকায় হেদায়েত উল্লাহ নামে আরেক ব্যক্তি আটোরিকশা ও লরির সংঘর্ষে মারা যান। ২ সেপ্টেম্বর বিয়ের কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার সময় কেএমটেক এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হন শামসুন্নাহার (৬০) নামে এক নারী। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নিহতের মেয়ে মিশু আক্তার (২৫)। উপজেলার বিবিরহাট বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পার্শ্বে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের কেএমটেক মোড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে পেলাগাজি দিঘি এলাকায় নিহত হন দুই স্কুল ছাত্রী মিশু আকতার ও নিশা মনি। তাদের মৃত্যুর ঘটনায় এই সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এলেও তা বন্ধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্ততা ছিল ১৮ ফুট। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী বাস স্টেশন থেকে ফটিকছড়ির নয়া বাজার পর্যন্ত সড়কটি ৩৬ ফুট প্রশস্ত করা হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সড়ক উন্নয়নের কাজ পায় র্যাবআরসি নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে এখনো সড়ক ও জনপথ বিভাগকে কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রশস্তকরণ কাজের কারণেও ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
কাজের প্রয়োজনে এ সড়কে প্রায় যাতায়াত করেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিম। তিনি সমকালকে বলেন, 'সড়কটি প্রশস্ত করার পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। ছোট গাড়ি চলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, বেপরোয়া গতি ও সড়ক ডিভাইডার না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী,শাহরিয়ার কামাল বলেন, 'প্রতিটি দুর্ঘটনা অনাকাঙ্খিত। সড়কটি প্রশস্ত হওয়ার ফলে চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান, এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে সড়ককে সরু করে রাখা হয়-এটাও ঠিক। কিন্তু বেপরোয়া গতি রোধ করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করার বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ নয়।' তিনি এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।