জলাধারের সীমানা নিয়ে গ্রামবাসী-পাউবোর সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা

নীলফামারীর ডিমলায় জলাধার খননের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:০৭ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:০৭
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের ওয়াটার রিজার্ভার (জলাধার) খননের সীমানাকে কেন্দ্র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নি সংযোগের ঘটনার ৪ দিন পর ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬০০ গ্রামবাসীকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।
বুধবার রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জলঢাকা ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী একরামুল হক বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিমলা থানার ওসি লাইছুর রহমান। তিনি জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জের কুঠিরডাঙ্গা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাধারের সীমানা নির্ধারণ করতে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তিনটি মোটরসাইকেল, নদী খননে ব্যবহৃত এক্সকাভেটর, বালু তোলার তিনটি ড্রেজার মেশিন ও ঠিকাদারের ঘর পুড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মামলায় জলঢাকা গোলনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির চৌধুরীসহ ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬০০ গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা জানায়, ডিমলা উপজেলার বুড়িতিস্তা নদীর ওপর ওয়াটার রিজার্ভার (জলাধার) প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ১৯৬৮ সালে। এসময় কালিগঞ্জ নামক স্থানে ৩০০ ফুটের একটি ব্যারাজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে সময়ে এলাকার পাঁচটি গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর জমিতে জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাধারের ওই পরিমাণ জমি সরকার অধিগ্রহণ করেনি। ফলে এলাকার পাঁচ গ্রামের প্রায় চার শতাধিক কৃষক দীর্ঘদিন ধরে মালিকানার এসব জমি নিজ দখলে রেখে কৃষিকাজ করে আসছেন। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড জমির মালিকানা দাবি করে পুনরায় জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কৃষকরা নিম্ন আদালতে ৩টি এবং উচ্চ আদালতে ২টি মামলা করেন। বর্তমানে এসব মামলা চলমান আছে। মামলা নিস্পত্তি হওয়ার আগে কাজ শুরু করতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেয়।
জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার পাঁচটি গ্রামে ১ হাজার ২১৭ দশমিক ৬১ একরের মধ্যে বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের ওয়াটার রিজার্ভার রয়েছে। এ গ্রামগুলো হলো, ডিমলা উপজেলার পচারহাট, রামডাঙ্গা ও কুঠিরডাঙ্গা এবং জলঢাকা উপজেলার খারিজা গোলনা ও চিড়াভিজা গোলনা। ওই পরিমাণ জমির মধ্যে সম্প্রতি ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় ৬৬০ একর জমিতে ওয়াটার রিজার্ভার (জলাধার) খননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে জলাধারের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। প্রকল্পটির মেয়াদ আছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
রফিকুল ইসলাম নামে কুটিরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বলেন, ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাধার খননের সীমানা নির্ধারণ করতে আসলে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী সেখানে গেলেও কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি। বরং পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ঠিকাদারের লোকজন এলাকাবাসীকে ধাওয়া করে হামলা চালায়। অথচ এ ঘটনায় উচ্চ আদলতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ইতিপূর্বেও তারা আমাদের নামে একটি মিথ্যা মামলা করেছে। এ মামলায় এখনও ২৫ জন গ্রামবাসী কারাবাস করছেন। আবার এতগুলো মানুষের নামে মামলা করেছে। গ্রেপ্তারের ভয় গ্রামগুলো এখন পুরুষ শূন্য।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার বলেন, ওইদিন সেখানে জলাধার খননের জন্য যাইনি। শুধু সীমানা নির্ধারণের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা উপস্থিত হলে গ্রামবাসী অতর্কিতভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি করা হয়েছে।
- বিষয় :
- নীলফামারী
- ডিমলা
- জলাধারের সীমানা নির্ধারণ