ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কুমিল্লায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী গ্রেপ্তার

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা চলছে পা ঝলসে যাওয়া গৃহকর্মী সুমাইয়ার। ছবি - সমকাল

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৫:২৫ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৭:৩০

১০ বছরের গৃহপরিচারিকা সুমাইয়া আক্তার। তার পুরো শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা, মারধরের ক্ষতচিহ্ন। গরম পানিতে ঝলসে গেছে শরীরের নিচের অংশ। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার শহরতলির ধর্মপুর এলাকায় বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা করিয়েছে। পরে তাকে কোতোয়ালি মডেল থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী তাহমিনা তুহিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে বুধবার সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সুমাইয়া কুমিল্লা নগরীর শুভপুর এলাকার লিটন মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় সুমাইয়ার মামা মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। গ্রেফতার তাহমিনা তুহিন কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরের স্ত্রী।

সুমাইয়ার স্বজনরা জানান, ৪ বছর আগে তাকে কাজের জন্য ওই বাসায় নেওয়া হয়। প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতো পরিবারের লোকজন। ঠিক মতো খাবার দিত না। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিভিন্ন সময় তারা শিশুটিকে মারধর করা ছাড়াও গরম পানি ও খুনতির ছ্যাকা দিয়েছে এবং অভুক্ত রেখে অমানবিক নির্যাতন করেছে। তাকে বাথরুমে ঠান্ডা পানিতে ভেজা কাপড়ে আটকে রাখা হতো।

নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী তাহমিনা তুহিন। ছবি-সংগৃহীত

শিশুটি জানায়, গত সোমবার রাতে এক কাপ দুধ খাওয়ার অপরাধে গৃহকত্রী নির্যাতন করে গরম পানি ঢেলে দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝলসানো পা নিয়ে নগরীর ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন এসআরটি প্যালেসের দ্বিতীয় তলার বাসা থেকে লাফিয়ে পড়ে সে। পরে কলেজের ছাত্রীদের একটি হোস্টেলে ঢুকে আশ্রয় চায়। শিশুটির অভিযোগ, কাজে দেরি হলেই তাকে মারধর করা হয়।

ভিক্টোরিয়া কলেজের একাধিক ছাত্রী জানান, কয়েক দিন ধরেই তারা ওই বাসা থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ পাচ্ছিলেন। মঙ্গলবারও আওয়াজ পেয়েছেন। ঝলসে যাওয়া পা নিয়ে হোস্টেলে এসে আশ্রয় চায় সুমাইয়া। সে বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করে। তাকে আশ্রয় দেওয়া হলে তাহমিনা তুহিন এসে তাকে বাসায় নিয়ে আটকে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয়দের বাধায় পারেননি। পরে ছাত্রীরা জাতীয় জরল্ফম্নরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সুমাইয়ার মামা ইব্রাহীম জানান, শিশুটির দেহ গরম পানি দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে। তার হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের ÿতচিহ্ন রয়েছে। তবে গৃহকর্তা আবু তাহের বলেন, সুমাইয়া তাদের পরিচিত পরিবারের। এ ঘটনার দিন তিনি বাইরে ছিলেন। তার স্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি সুমাইয়াকে মারধর করেননি। সুমাইয়া পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় অসাবধানতাবশত গরম পানি লেগেছে। নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয়। কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ হানিফ সরকার সমকালকে বলেন, গরম পানি দিয়ে গৃহকর্মীর শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গৃহকত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×