ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে ইট-বল্লম এগিয়ে দিচ্ছিল নারী ও শিশুরা

রণক্ষেত্রে ইট-বল্লম এগিয়ে দিচ্ছিল নারী ও শিশুরা

ছবি: সমকাল

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬:০৯ | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬:০৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সিএনজিচালিত অটোরিকশা গায়ে লাগা নিয়ে কথাকাটাকাটি, হাতাহাতি ও ভাঙচুরের জেরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে একটি গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ার গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে আশুগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামের জারুর (রাসেল চেয়ারম্যান) এবং বারঘরিয়া (মিজান মেম্বার) গোষ্ঠীর মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। আহতদের মধ্যে একজন সদর হাসপাতালে ও অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষের সময় দু'পক্ষের পুরুষদের কাছে নানা সামগ্রী ও পানি এগিয়ে দিতে দেখা যায় নারী ও শিশুদের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে দুর্গাপুর গ্রামের বারঘরিয়া গোষ্ঠীর মুন্সিবাড়িতে ওয়াজ মাহফিল চলছিল। এতে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বেশকিছু দোকানও বসে। রাস্তাটি দিয়ে জারুরবাড়ির মো. কুতুব মিয়ার ছেলে মো. রুহুল আমিন অটো নিয়ে যেতে চাইলে একজনের গায়ে লাগে। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে রুহুলকে মারধর ও অটোরিকশা ভাঙচুর করে বারঘরিয়া গোষ্ঠীর লোকজন। পরে রুহুল বাড়িতে বিষয়টি জানালে তারা বারঘরিয়ার দুটি অটোরিকশা আটকে দেয়।

বিষয়টি সমাধানের জন্য দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাসেল মিয়া বারঘরিয়া গোষ্ঠীর ইউপি সদস্য মো. মিজান মিয়াকে ডাকেন। তিনি চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে জারুর গোষ্ঠীর লোকজন তাঁকে পিটিয়ে আহত করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বারঘরিয়া গোষ্ঠীর লোকজন দা-বল্লম নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও শনিবার সকালে আবারও দু'পক্ষ অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।

সরেজমিন গ্রামের অন্তত ছয়টি স্থানে সংঘর্ষ হতে দেখা যায়। পুরো গ্রাম যেন রণক্ষেত্র ছিল। দু'পক্ষ একে অন্যের দিকে ইটপাটকেল ও বল্লম ছোড়ে। এমনকি পুরুষদের কাছে নারী ও শিশুদের ইটপাটকেল জোগান দিতে এবং পানি পান করিয়ে সাহস দিতে দেখা গেছে। কয়েকজন মোবাইল ফোনে সমর্থকদের সংঘর্ষে নামতে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। পরে পুলিশ অন্তত বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সি ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউপি সদস্য মো. মিজান মিয়া বলেন, ঘটনা মীমাংসার কথা বলে চেয়ারম্যান তাঁর বাড়িতে ডেকে নেন। তাঁর সামনেই লোকজন তাঁকে পিটিয়ে আহত করেছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল মিয়া বলেন, রাতের ঘটনার জেরে শনিবার ফের সংঘর্ষ হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ মুন্সি বলেন, স্থানীয় সরদার ও মাতবরদের নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাঁরা নির্দেশনা অমান্য করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

আশুগঞ্জ থানার ওসি মো. আজাদ রহমান বলেন, গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পরবর্তী সময়ে সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

×