কুলিয়ারচরে বিষক্রিয়ায় ৫ মৃত্যু: কাটেনি রহস্যের ঘোর, হয়নি মামলা

কিশোরগঞ্জ ও কুলিয়ারচর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৭:৫৯ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৭:৫৯
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিষক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ পাঁচজনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের ঘোর কাটছে না। মৃতদের একজনের সুরতহাল প্রতিবেদনে মদপানের কথা উল্লেখ থাকলেও পুলিশ, পরিবার, রাজনীতিবিদসহ কেউ মাদকের বিষয়টি স্বীকার করেননি। এ ছাড়া একসঙ্গে দাওয়াত খেয়ে আসার পর অস্বাভাবিকভাবে দু'দিনের মধ্যে তাঁদের মৃত্যু হলেও থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। এমনকি অপমৃত্যুর মামলাও হয়নি।
জানা গেছে, গত শনিবার তাঁরা কুলিয়ারচর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস মোহাম্মদ রাসেল কাশেমীর বাসায় দাওয়াত খেতে যান। সেখান থেকে ফেরার পরই একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন ছয়জন। তাঁদের মধ্যে ওই রাতেই দুই আওয়ামী লীগ নেতার গাড়িচালক মো. শাহজাহানের মৃত্যু হয়। বাকিদের মধ্যে কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির রায়হান জজ ও গিয়াস উদ্দিন, কুলিয়ারচর বাজারের হোমিও চিকিৎসক গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস ও উপজেলা আওয়ামী অফিস সংলগ্ন চায়ের দোকানি লিটন মিয়ার মৃত্যু হয় সোমবার ভোর থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে। এ ছাড়া কুলিয়ারচর পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।আলোচিত এ ঘটনায় মদের বিষক্রিয়ার বিষয়টি বারবার সামনে এলেও স্বজন ও পুলিশের কেউ তা স্বীকার করেননি। শুধু গিয়াস উদ্দিনের সুরতহাল প্রতিবেদনে মদপানের কথা উল্লেখ আছে। বাজিতপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, জহুরুল ইসলাম হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমের মতামতের ভিত্তিতে এ সুরতহাল প্রতিবেদনে মদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে অন্যদের বিষয়ে কোথাও মদপানের কথা বলা হয়নি। এমনকি মৃতদের মধ্যে দু'জনের ময়নাতদন্ত করা হলেও বাকিদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।
কুলিয়ারচর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা মৃত্যুর কারণ হিসেবে মদের বিষক্রিয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখও বলেন, একজনের সুরতহাল প্রতিবেদনে মদের কথা উল্লেখ থাকলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এর আগে মদের কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। মৃত গোবিন্দ বিশ্বাসের ছোট ভাই আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাসের দাবি, তাঁর ভাই দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক নানা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এ থেকে হৃদরোগে মারা গেছেন।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম জানান, দু'জনের ময়নাতদন্তের সময় ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলো সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। সেই প্রতিবেদন পেলে মদ্যপানের বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, শনিবার ওই ছয়জন পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস মোহাম্মদ রাসেল কাশেমীর বাসায় দাওয়াত খাওয়ার পর মদপান করেছিলেন বলে তাঁদের ধারণা। ডা. গোবিন্দ বিশ্বাসের হোমিও দোকানে অ্যালকোহল বিক্রির কথাও জানিয়েছেন কয়েকজন। তবে দাওয়াত খাওয়ার বিষয়ে জানার জন্য রাসেল কাশেমীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।