ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সন্তান ‘বেচে’ কান্না থামছিল না লিমার

সন্তান ‘বেচে’ কান্না থামছিল না লিমার

ছবি: সমকাল

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬:৩৭ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৬:৩৭

‘ছাওয়াল গর্ভেতে ধরি শুকায় পোয়াতি/মাতার লোহুতে পুত্র বাড়ে দিবারাতি’ দেশের উত্তরাঞ্চলের লোককথাকে উপন্যাস খোয়াবনামায় তুলে এনেছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তীব্র যন্ত্রণায় ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণের পর সন্তান প্রসব করে স্বর্গীয় হাসিতে মাতেন মা। অভাবের তাড়নায় টাকার বিনিময়ে মা তুলে দিতে বাধ্য হন সেই সন্তান- তখন অন্তঃরাত্মাও কেঁপে ওঠে। প্রশ্ন জাগে- সে অভাবের তীব্রতা ছিল কতটুকু?

এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন গাজীপুরের টঙ্গীর লিমা হনুফা (৩৩)। বাড়ি ভাড়ার টাকা, দোকানের বাকি এবং ওষুধের দোকানের দেনা শোধে ৪৭ দিন বয়সী ছেলেকে টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। তবে এর দু'দিনও যায়নি, তাঁর আর্তনাদ প্রতিবেশীদের কান হয়ে পৌঁছে যায় পুলিশের কাছে। দুদিনের মাথায় সেই সন্তান ফিরে পান।

মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ঢাকার দোহারের এক দম্পতির কোলে সোমবার তুলে দেন নাড়িছেঁড়া ধন। তাঁদের বুকেও ছিল দীর্ঘদিন ধরে নিঃসন্তান থাকার হাহাকার। তাঁদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা হয় শিশুটিকে। বুধবার তুলে দেওয়া হয় লিমার কোলে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী পূর্ব থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (অপরাধ-দক্ষিণ) উপকমিশনার মাহবুব উজ-জামান।

পুলিশ জানায়, টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুরের এক বাড়িতে ৬-৭ বছর ধরে ভাড়া থাকেন লিমা। ১৭ বছর আগে বিয়ে হয় মাসুম মিয়ার সঙ্গে। এ দম্পতির রয়েছে ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে ও ৮ বছর বয়সী এক ছেলে। একটি কারখানার শ্রমিক মাসুম পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যান। এর পর থেকে কাজ জুটছিল না তাঁর। লিমা বাসাবাড়িতে কাজ করতেন।

লিমা হনুফা বলেন, সর্বশেষ ছেলে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর কাজ করতে পারছিলেন না। স্বামী পঙ্গু হয়ে ঘরবন্দি। তাঁকে কেউ কাজে নেয় না। কখনও বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া সামান্য চাল বা প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল তাঁদের। এর মধ্যে বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। সব মিলিয়ে তিন মাসে তাঁর ঘর ভাড়া বাকি পড়ে ১২ হাজার টাকা। পাশের দোকানেও পায় ১০ হাজার টাকা। ওষুধের দোকানে দেনা ৮ হাজার টাকা। বাড়িমালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিলে বাধ্য হয়ে নাড়িছেঁড়া ধনকে মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে দিয়ে দেন।

এরপর থেকে কান্না থামছিল না লিমার। স্থানীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে ৯৯৯ নম্বরে কল করে জানায় পুলিশকে। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম ৩০ হাজার টাকা শোধ করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনেন। তিনি বলেন, সন্তান লালন-পালনের সুবিধার জন্য বাবা মাসুম মিয়াকে স্থানীয় এ টি হক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার টাকার বেতনে চাকরির ব্যবস্থাও করেছেন। অন্য দুই সন্তানের লেখাপড়া যেন ঠিক থাকে, সে ব্যবস্থাও নিয়েছেন।

টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে নেওয়া দোহারের ওই নারী বলেন, ‘আমরা নিঃসন্তান। তাই ছেলেটিকে লালন-পালনের জন্য নিয়েছিলাম। পুলিশের নির্দেশে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।’

আরও পড়ুন

×