দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
ওএমএসের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে

সাঁথিয়ার দৌলতপুর বাজারে রোববার ওএমএসের চাল কিনতে বিক্রয় কেন্দ্রে মানুষের লাইন - সমকাল
জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা)
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০৭:৫৩
কম দামে চাল কিনতে পাবনার সাঁথিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী দাঁড়িয়ে ছিলেন ওএমএসের লাইনে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁর। চাল, ডাল, তেল, গ্যাসসহ (সিলিন্ডার) প্রতিটি পণ্যের দাম নাগালের বাইরে। তিনি বলছিলেন, ওএমএসের দোকানে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হবে, কোনোদিন ভাবেননি। দোকানের আয়ে ভালোভাবেই সংসার চলে যেত। এখন চলতে না পারায় লজ্জা লাগলেও লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আগে এক দিন দেরিতে আসায় চাল পাননি। এ জন্য তাড়াতাড়ি এসেছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ায় জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কিছুটা কম দামে খোলা বাজারের (ওএমএস) চাল পেতে 'নিরুপায়' হয়ে নিম্নবিত্তদের সঙ্গে অনেক মধ্যবিত্তও লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে এ লাইন। নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে ক্রেতা বেশি হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে পণ্য পাচ্ছেন না। চাল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আগে প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে দুই টন চাল বরাদ্দ থাকলেও এখন দেওয়া হচ্ছে এক টন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া পৌর এলাকার দৌলতপুর ও গোপীনাথপুর বাজার, কালীবাড়ি সড়ক-সংলগ্ন এবং বোয়াইলমারী বাজারে চারটি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। চারজন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রে দিনে এক টন করে ওএমএসের চাল বিক্রি হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহে পাঁচ দিন জনপ্রতি পাঁচ কেজি করে ৩০ টাকার চাল বিক্রি করা হয়।
কালীবাড়ি সড়ক-সংলগ্ন ডিলার মোক্তার হোসেন ও দৌলতপুর বাজারের আব্দুল আউয়ালের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হয়। সরেজমিনে গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায়, চাল কিনতে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন মার্জিত পোশাকের। লাইনে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
কয়েকজন জানান, তাঁরা মধ্যবিত্ত পরিবারের ও বিভিন্ন দপ্তরের চাকরিজীবী। নিরুপায় হয়ে তাঁরা ওএমএসের দোকানে চাল কিনতে এসেছেন। অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে দিনমজুরদের দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছেন।
দৌলতপুর বাজারের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে সকাল ১১টার দিকে চালের জন্য আকুতি জানাচ্ছিলেন কয়েকজন নারীসহ অনেকে। তাঁরা জানান, সকাল সাড়ে ৬টায় লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু ১১টায় জানতে পারেন, বরাদ্দের চাল শেষ। কালীবাড়ি সড়ক-সংলগ্ন বিক্রয় কেন্দ্রে কথা হয় কালাইচাড়া গ্রামের তিন ব্যক্তির সঙ্গে। তাঁরা জানান, আগে দু'দিন এসে চাল না পেয়ে ফিরে গেছেন। এদিনও সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ালেও জানেন না চাল পাবেন কিনা।
ভবানীপুর গ্রামের এক নারী বলেন, 'আমার পরিবারে তিন ছেলে, দুই মেয়েসহ সাতজন সদস্য। বাড়ির জায়গাজমি নাই, থাকি ক্যানালে (সেচ খালের বাঁধের ওপর)। দিনে প্রায় দুই কেজি চাল লাগে। ছোট বাচ্চাটা রাইখ্যে সকাল থেইক্যে লাইনে দাঁড়ায়া আছি। কিন্তু চাল পাল্যেম না, পোলাপান নিয়ে্য কি খাবো নে?'
চাল কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, বাজারে নিম্নমানের চাল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ওএমএসের বিক্রয় কেন্দ্রে চাল ৩০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মানও ভালো। তাই তাঁরা ওএমএসের দোকানে ভিড় করছেন।
ডিলার মোক্তার হোসেন বলেন, দিন যত যাচ্ছে, লাইনও দীর্ঘ হচ্ছে। নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ২০০ মানুষের কাছে বিক্রির জন্য এক টন চাল বরাদ্দ পান। আগে দুই টন বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় ঠিক ছিল। এখন বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা বেশি। বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। দৌলতপুর বাজারের ডিলার আব্দুল আউয়াল বলেন, যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন, অর্ধেকের বেশি ফিরে যেতে হবে। যে পরিমাণ চাহিদা, তা দেওয়া যাচ্ছে না।
সাঁথিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শাহীনুর আলম বলেন, খোলাবাজারের দোকানে দিন দিন ভিড় বাড়ছে। আগে আটা বরাদ্দ থাকলেও এখন নেই। চালের সঙ্গে আটা বরাদ্দ পাওয়া গেলে দরিদ্র মানুষের জন্য ভালো হতো। চাহিদার ভিত্তিতে ওএমএসের চালের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বিক্রিতে যাতে অনিয়ম না হয়, সে বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে।