ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি সম্ভব হচ্ছে না

মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি সম্ভব হচ্ছে না

আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী

আব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০৭:০০

রিহ্যাবের আবাসন মেলা সামনে রেখে আবাসন খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে সমকালের মুখোমুখি হয়েছিলেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন

সমকাল: এবারের মেলার নতুন আকর্ষণ কী?

আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী: এবার জমজমাট একটি মেলা উপহার দিতে চাই। প্রতিবারই শেলাকে আগের বছরগুলো থেকে ভিন্নতর করার চেষ্টা করি। কারণ এই খাতকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে নতুনত্ব আনতে হবে। এবার মেলায় একটি মিডিয়া কর্নার রাখা হবে। যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আলোচনায় অংশ নেবেন। এছাড়াও প্রতিদিন মেলা জমজমাট রাখতে রয়েছে নানা উদ্যোগ।

সমকাল: উদ্যোগগুলো কী?

আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী: যেমন মেলায় প্রদর্শিত ফ্ল্যাট-প্লটগুলো বিক্রির জন্য দর্শনার্থীদের পাশাপাশি প্রকৃত গ্রাহককে কিভাবে মেলায় আনা যায় ভিন্ন আঙ্গিকে সেই পরিকল্পনা করেছি। টিকেট বিক্রি করে লাভবান হবো এমন চিন্তা-ভাবনা কখনো আমরা করিনি। সম্মানিত ক্রেতারা স্ব-উদ্যোগে নয়, তাদেরকে আমরাই আমাদের উদ্যোগে মেলায় আনার ব্যবস্থা করছি। যাদের ফ্ল্যাট-প্লট কেনার সামর্থ আছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। তাদের জন্য ফ্রি টিকেট পাঠিয়েছি। যাতে তারা একবার হলেও মেলায় এসে ঘুরে যান।

সমকাল: চট্টগ্রামে আবাসন খাতের অবস্থা এখন কেমন? 

আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী: পুরো দেশের আবাসন খাত একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। নির্মাণসামগ্রীর আকাশচুম্বী দাম। তবুও চেষ্টা করছি গ্রাহকের সাধ্যের মধ্যে ফ্ল্যাট তৈরি করতে। প্রতিদিন আমরা পর্যালোচনা করছি। রডের দাম, সিমেন্টের দাম দিনদিন বাড়ছে। যাদের রেডি ফ্ল্যাট আছে তারা হয়তো কিছুটা উপকৃত হচ্ছেন। ভবিষ্যতের জন্য কিন্তু অশনি সংকেত দেখছি। সেটা কিভাবে দূর করা যায় সেটার জন্য আমরা কাজ করছি। কিন্তু দাম বাড়ার কারণে অনেক প্রকল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কোনো প্রকল্প হাতে নিলে বাজেট নিরূপণ করা হয়। আগে পাঁচ হাজার টাকা স্কয়ার ফিটে বিক্রি করা হলেও, এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক সময়ে প্রকল্প হস্তান্তর করা নিয়েও সংশয় তৈরি হচ্ছে। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সরকারকে শুল্ক্ক কমিয়ে রড-সিমেন্টের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সমকাল: আবাসন খাতে এখনও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী?

আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী: এই খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সকল নাগরিকের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের ব্যবস্থা না থাকা ও ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনা হয়েছিল। এখন সেই সীমা তুলে দেওয়ার আলোচনা চলছে। রিটেইল পর্যায়ে ইতিমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে রাখতে হবে। এছাড়া কম সুদে দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে মানুষ বাসা ভাড়ার টাকায় ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারেন।

প্লট ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ফি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যা এখন ১৪ শতাংশ। ফ্ল্যাটের সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরি করতে হবে। এ জন্য একটা ফ্ল্যাট যখন দুই বার বিক্রি হবে দ্বিতীয়বার বিক্রির ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি নূ্যনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। এখন নতুন ফ্ল্যাট বিক্রিতে যে নিবন্ধন ফি, পুরনো ফ্ল্যাট বিক্রিতেও একই নিবন্ধন ফি দিতে হয়। এটা ২ শতাংশে নিয়ে আসলে এ খাতে নতুন বিনিয়োগ আসবে।

সমকাল: স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতে সরকারের কী সহযোগিতা প্রয়োজন?

আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী: এটা সত্যি যে বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। শহরে মানুষের ঘনত্ব বাড়ছে। শহরকে বাড়াতে হবে। চট্টগ্রাম শহর নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হয়েছে। আবাসন সংকট নিরসনে মাস্টারপ্ল্যানে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে স্যাটেলাইট টাউনের জন্য জায়গা রাখতে হবে। সেখানে আবাসন ব্যবসায়ীদের ভূমি বরাদ্দ দিলে স্বল্পমূল্যে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের আবাসন নিশ্চিত করতে পারতেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপÿ প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে। প্লট বরাদ্দ দিলে লাভবান হন একজন মানুষ। তা না করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি ভূমি দেওয়া হয় তাহলে খুব কম টাকায় গ্রাহকদের ফ্ল্যাট দেওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন

×